চিকুনগুনিয়া ডেঙ্গুর মতোই একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এই রোগের প্রধান লক্ষণগুলি হল জ্বর এবং জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, পেশী ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি এবং ফুসকুড়ির মতো অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
১৯৫২ সালে দক্ষিণ তানজানিয়ায় এই রোগের প্রথম প্রাদুর্ভাব হয়েছিল। চিকুনগুনিয়া দ্বারা সৃষ্ট জয়েন্টে ব্যথা বিশেষভাবে বেদনাদায়ক এবং শরীরকে দুর্বল করে তোলে। এই জয়েন্ট ব্যথা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।
রোগীর লক্ষ্মণ
রোগী সাধারণত হঠাৎ জ্বর এবং তীব্র জয়েন্টে ব্যথা নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে আসেন। সংক্রামিত মশার কামড়ের দুই থেকে দশ দিন পরে এর লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়। অন্যান্য উপসর্গ যেমন পেশী ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি এবং ফুসকুড়ি, সারা শরীরে ছোট ছোট লাল দাগ ও হতে পারে। চোখের, স্নায়ুর, হার্টের জটিলতা এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনালের মতো অঙ্গের সমস্যা ও দেখা দেয়। অসুস্থতার কারণে দুর্বল এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের মৃত্যুর কারণ ও হতে পারে এই মশার কামড় । তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, লক্ষণগুলি হালকা ও অচেনা, অথবা ভুল নির্ণয় হতে পারে, বিশেষ করে যেখানে ডেঙ্গুপ্রবন এলাকা।
সংক্রমণ
সংক্রামিত স্ত্রী মশার কামড়ে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। মশা প্রধানত দুই প্রকার এডিস অ্যালবোপিকটাস এবং এডিস ইজিপ্টি। এই মশাগুলো মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়। কিছু ধরণের পাখি এবং ইঁদুরের মতো প্রাণীদের মধ্যেও এই ভাইরাসটি বেঁচে থাকে।
রোগ নির্ণয়
ডাক্তারবাবুর পর্যবেক্ষণ এবং ল্যাব পরীক্ষার দ্বারা এই রোগ নির্ণয় করা হয়। রক্ত পরীক্ষায় ডব্লিউবিসি গণনা কমে যেতে পারে, তবে ভাইরাল অ্যান্টিজেন বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা
চিকুনগুনিয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। দয়া করে মনে রাখবেন, যেহেতু এটি একটি ভাইরাল অসুস্থতা, তাই এন্টিবায়োটিকগুলি এই চিকিৎসায় অকার্যকর। অ্যান্টি-পাইরেটিকস, ব্যথানাশক এবং তরল ব্যবহার করে জয়েন্টে ব্যথা সহ অন্যান্য উপসর্গগুলি উপশম করার জন্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করা হয়।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
যেহেতু এই রোগের ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি তাই প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল সংক্রামিত মশার সংস্পর্শ এড়ানো।মশার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের আবাসস্থল সীমাবদ্ধ করা। সেইসঙ্গে তাদের অবলুপ্তি করার বিভিন্ন পদ্ধতি। আশেপাশে জমে থাকা জল বা পুল পরিষ্কার রাখুন, যেখানে মশা বংশবিস্তার করতে পারে। মশার প্রবেশ রোধ করতে সন্ধ্যায় মশারি ব্যবহার করুন এবং জানালায় মশা প্রতিরোধক জাল (নেট) দিয়ে ঢেকে রাখুন।
প্রাদুর্ভাবের সময়, উড়ন্ত মশা মারার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা যেতে পারে, তবে লক্ষ্য রাখবেন তা যেন আপনার চোখে এসে না পড়ে । মশা যেখানে বেশী ওড়ে তার আশেপাশের পাত্রে কীটনাশক প্রয়োগ এবং অপরিণত মশার লার্ভা মারার জন্য অব্যবহৃত পাত্রে জমে থাকা জল শোধন করে মশার বংশবৃদ্ধি আটকানো যায়। চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের সময় সুরক্ষার জন্য, ফুল প্যান্ট আর ফুল হাতা জামা পরে থাকুন।
যারা দিনের বেলা ঘুমায়, বিশেষ করে ছোট শিশু, বা অসুস্থ বা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য মশারি ভালো সুরক্ষা দেয়। মশার কয়েল বা অন্যান্য কীটনাশক ভেপোরাইজারও ঘরের ভেতর মশার কামড় কমাতে পারে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভ্রমণকারী ব্যক্তিদের প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যার মধ্যে রেপিলেন্ট ব্যবহার করা, লম্বা হাতাযুক্ত জামা ও প্যান্ট পরা এবং ঘরে মশা যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জানালা দরজায় পর্দা লাগানো আছে কিনা তা নিশ্চিত করা। এভাবেই আমরা মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারি ।