যে কোনও বয়সেই সুবিধামতো হাঁটা যায়। হাঁটলে শরীরের পা থেকে মাথা পর্যন্ত উপকার পাওয়া যায়। তাই আমরা বরং পা থেকেই শুরু করি।
পায়ের পেশি: প্রতিদিন মিনিট চল্লিশেক হাঁটলে পায়ের কাফ মাসল রীতিমতো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কাফ মাসলের মধ্যে গ্যাস্ট্রোনিমিয়াস, সোলিয়াস পেশির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। এছাড়া কোয়াড্রিশেপস মাসলগুলির উন্নতি দেখা যায়। আবার হ্যামস্ট্রিং মাসলের অন্তর্ভুক্ত বাইসেপস ফিমোরিস, সেমিমেমব্রানোসাস, সেমি টেনডোনিয়াস পেশিগুলিও ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এছাড়া থাই মাসলের মধ্যে আছে পেক্টিনিয়াস, অ্যাডাকটর ব্রেভিস, অ্যাডকটর লংগাস, ভাসটাস মিডিয়ালিস, ভাসটাস ইন্টারমিডিয়াস এবং রেকটাস ফিমোরিস। হাঁটলে এই পেশিগুলিও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পায়ের পেশিগুলি শক্তিশালী হওয়ার অন্যতম ভালো ফল হল, অস্টিওআর্থারাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে। এছাড়া পায়ের রক্তবাহী নালিগুলির মধ্যে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। পায়ের রক্তবাহী নালির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হওয়া প্রয়োজন। কারণ হার্ট থেকে রক্ত সঞ্চালিত হয়ে পায়ে নামে। পা থেকে আবার রক্ত ফিরে যায় হার্টে। পায়ের পেশি যত শক্তিশালী হবে, তত পা থেকে ভালোভাবে রক্ত ফিরে যেতে পারবে হার্টে। পায়ের বিভিন্ন রক্তবাহী নালিতে রক্ত জমাট বাঁধার সুযোগ পাবে না। কমবে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হওয়ার আশঙ্কা। এছাড়া পায়ের রক্তবাহী নালি থেকে জমাট রক্ত রক্তের মাধ্যমে হার্টেও চলে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
পিঠ ও কোমর: ইরেকটার স্পাইনি, সোয়াস মেজরের মতো পেশিগুলি শরীরের ভার বইতে সাহায্য করে। মেরুদণ্ড সোজা রাখে। হাঁটলে এই পেশিগুলি শক্ত হয়।
কাঁধ: সঠিকভাবে হাঁটলে ডেলটয়েড, টেরিস মেজর এবং মাইনর, রমবয়েড পেশিগুলি সুস্থ সবল থাকে। কারণ হাঁটার সময় হাতেরও সঞ্চালন ঘটে।
বুক: পেকটরলিস মেজর এবং মাইনর পেশিগুলি কাঁধের সঙ্গে সংযুক্তি বজায় রাখে। এছাড়া ভারী কিছু তুলতে, ছুঁড়ে ফেলতে সাহায্য করে পেশিগুলি। হাঁটলে এই মাসলগুলিরও বৃদ্ধি হয়।
হাত: ল্যাটিমিমসা, সেরেটাস অ্যান্টিরিওর, ডরসির মতো পেশিগুলি হাতের পক্ষে জরুরি, হাঁটলে এই পেশিগুলির সচলতা বাড়ে।
পেট: হাঁটাহাঁটি করলে রেকটাস অ্যাবডোমিনিজ, ট্রান্সভার্স অ্যাবডোমিনিজ, তাবলিকাস মাসলের মতো পেটের পেশিগুলি শক্তিশালী হয়। ফলে পাচনতন্ত্রের পেরিস্টলসিস বা খাদ্যের গমন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হবে। পেটে ফ্যাট জমে না। কনস্টিপেশন হয় না। খাদ্য হজম হয় দ্রুত।
শ্বসনতন্ত্রের কাজ জোরে হাঁটলে ফুসফুসের ব্যায়াম হয়। কারণ যখন আমরা জোরে হাঁটি তখন দ্রুতবেগে হাপরের মতো ফুসফুসও ফুলে ওঠে আর কমে যায়। আমাদের হাঁফ ধরে। অর্থাৎ ফুসফুসের বেশি পরিমাণে অক্সিজেনের দরকার পড়ে। শ্বাসযন্ত্র থেকে কার্বনডাই অক্সাইড বেশি পরিমাণে বেরতে থাকে। কম বয়স থেকেই হাঁটার অভ্যাস করলে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের সমস্যা হয় না।
মেদ: হাঁটলেই আমাদের ক্যালোরি বা শক্তির দরকার হয়। এই শক্তি আসে শরীরে জমানো ফ্যাট থেকে। হাঁটলে প্রচুর ক্যালোরি খরচ হয়। ফলে শরীরের চর্বি ঝরে যায় দ্রুত।
শিরদাঁড়া: শিরদাঁড়া সোজা রেখে হাঁটলে বাতের সমস্যা কোনওদিন ঘিরে ধরতে পারে না। যাঁদের ইতিমধ্যেই শিরদাঁড়ার নানা ধরনের বাতে আঁকড়ে ধরেছে, তাঁরা নানা ধরনের এক্সারসাইজ করতে না। পারলেও অন্তত হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।। একসঙ্গে প্রয়োজনীয় আসন অভ্যাস করলে বাতরোগে অনেকটাই উপকার পাওয়া যায়।