হাঁটলেই সুস্থ?

walking

একদমই তাই। হাঁটলেই শরীরে এতরকমের উন্নতি হয় যে বলে শেষ করার নয়। শরীরের রক্ত সংবহন প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। কারণ হাঁটার সময় শরীরের পেশিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের দরকার পড়ে। ফলে রক্তসংবহনও দ্রুত হওয়ার প্রয়োজন হয়। একইসঙ্গে পেশিরও বৃদ্ধি ঘটে। কারণ পেশিতে যত বেশি রক্তসঞ্চালন হবে, পেশিরও বৃদ্ধি তত বেশি হবে। মাসলে ফ্যাট জমবে কম।

সবচাইতে বড় ব্যাপার হল আমাদের শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়ায় প্রভৃত উল্লেখজনক পরিবর্তন হয়।

প্রশ্ন হল মেটাবলিজম কী? এককথায় বলা চলে, প্রাণীদেহের অসংখ্য কোষের সজীবতা এবং জৈবিক ক্রিয়া বজায় রাখার জন্য শরীরে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তাকেই মেটাবলিজম বলা হয়। মেটাবলিজম প্রক্রিয়াটি দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।

১) ক্যাটাবলিজম :এই পদ্ধতিতে গৃহীত খাদ্যকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভেঙে সরল করা হয়। এই সরল খাদ্য থেকেই শক্তি মেলে। (২) অ্যানাবলিজম : কোষের দ্বারা সরল খাদ্য ভেঙে তৈরি হওয়া বিভিন্ন জরুরি খনিজ এবং রাসায়নিক পদার্থ শোষিত। হওয়ার প্রক্রিয়া।

হাঁটলে আমাদের মেটাবলিজম বাড়ে। বিশেষ করে সুগার প্রতিরোধ করতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরে গ্লুকোজের মেটাবলিজম হওয়া খুবই দরকার। হাঁটার সময় মাসলগুলি বেশি কাজ করে।সেকথা আগেই বলেছি। ফলে গ্লুকোজ মেটাবলিজম বাড়ে। রক্তে শর্করার মাত্রাতেও রাশ টানা সম্ভব হয়।

এখানেই শেষ নয়, হাঁটলে শরীর থেকে ঘাম বের হয়। ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীরের টক্সিক পদার্থ। এমনকী দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিয়মিত হাঁটেন তাঁদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও কম থাকে।

এক্সারসাইজ করলেই আমাদের শরীরে এন্ডোর্ফিন হরমোন বের হয় যা দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।

আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা দরকার— সন্তানসম্ভবা মহিলারা চিকিৎসকের পরামর্শমতো নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটুন। শরীরে রক্তসঞ্চালন ভালো হবে। গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিও ভালো হয়।

ডাম্বেল কিনুন বা ট্রেডমিল— দু’পয়সা খরচ করতেই হবে। অথচ হটিতে গেলে খরচের কোনও বালাই নেই। বরং পুরোটাই লাভ। অতএর আজ থেকেই হাঁটাহাঁটি শুরু করতে পারেন। প্রথমে অল্প দূরত্ব পার করুন ধীরে ধীরে হেঁটে। এতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। তারপর আস্তে আস্তে হাঁটার গতি বাড়ান। প্রথমেই হুড়মুড় করে হাঁটতে শুরু করবেন না। কারণ অভ্যাস না থাকার দরুন সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন। গায়ে হাতে পায়ে ব্যথাও হতে পারে। কারণ শারীরিক সক্ষমতার বাইরে গিয়ে বেশিক্ষণ হাঁটলে পেশিতে অ্যানিরোবিক প্লাইকোলাইসিস হয়। অর্থাৎ মাসলে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় গ্লুকোজ নানা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। পেশিতে জমা হয়। ফলে শরীরে ব্যথা বোধ হয়। তাই ধীরে ধীরে হাঁটার সময় ও গতি বাড়ান। সত্তোরোর্ধরা হাঁটাহাঁটি শুরু করার আগে

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ কিছু কিছু শারীরিক সমস্যায় ইচ্ছেমতো হাঁটাহাঁটি করা যায় না। জোর করে হাঁটতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এছাড়া সদ্য কোনও অপারেশন হয়ে থাকলে বা রোগভোগ থেকে উঠেই হাঁটাহাঁটি শুরু করবেন না। শরীর সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মনে রাখবেন হাঁটা মানেই ক্যালরি বার্ন। তাই হেঁটে অতিরিক্ত মেদ ঝরানো সম্ভব। প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিটে ৩-৪ কিমি হেঁটে অতিক্রম করুন। সপ্তাহে একদিন অবশ্যই রেস্ট নেবেন।

কিছু ভুল ধারণা: অনেকেই ভাবেন রোজ সকালে বাজার করতে গিয়ে অনেকটা হাঁটতে হয়, তাছাড়া মলেও শপিং করতে গিয়ে হাঁটতে হয়। তারপরেও নতুন করে হাঁটা কি দরকার? তাঁদের জেনে রাখা দরকার বাজার করা বা মলে হাঁটার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালোর কোনও যোগ নেই। একটি নির্দিষ্ট ছন্দে এবং কোনও রকম বাধা ছাড়া হাঁটলে তবেই উপকার মেলে। বাজার করতে গেলে হাঁটার ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে। আবার বাড়ির মেয়েরা বলেন, তাঁরা হাঁটবেন কখন, এই তো রান্না করতে, বাসন মাজাতে আর ঘর মুছতেই সময় চলে। যাচ্ছে। এত পরিশ্রম হচ্ছে, আবার কেন হাঁটব। তাঁদের জানা দরকার, এক্সারসাইজের বিভিন্ন ভাগ আছে। ঘরের কাজের মধ্যে ঘর মোছা ছাড়া বাকিগুলিতে পরিশ্রম হলেও শরীরচর্চা হয় না। এই ধরনের কাজের মধ্যে কোনও নির্দিষ্ট ছন্দ থাকে না। তাই সব কাজ করলেও, একটা সময় বের করুন হাঁটার জন্য। শরীরে মেদ জমবে না। ফলে ওজনজনিত কারণে অল্পবয়সেই অস্টিওআথ্রাইটিসের কবলে পড়তে হবে না।