সঠিক হেয়ার স্টাইলে সৌন্দর্য খোলে। তবে শুধু ফ্যাশন করলেই তো হবে না। সঙ্গে চুলের স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখতে হবে। এতে স্টাইলও হবে আবার চুলের ক্ষতিও হবে না। তাই চুলের ব্যাপারে কতকগুলি বিষয়ের দিকে আগে থাকতেই নজর দেওয়া ভালো।
১) চুল যদি হয় তৈলাক্ত (oily hair)
• নিয়মিত চুল ধুতে হবে। আর স্ক্যাল্প বা চুলের গোড়া তৈলাক্ত হলে প্রতিদিন অথবা একদিন অন্তর চুলে শ্যাম্পু করতে হবে।
• তৈলাক্ত চুলের লোকেরা রং করালে সেই সময় চুল সাধারণত শুষ্ক হয়ে যায়।
তাই চুলে কেমিকেল রং (chemical dye)ব্যবহার করলে সপ্তাহে দু’বার শ্যাম্পু করাই বাঞ্ছনীয়।
• মনে রাখবেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে স্ক্যাল্প (scalp) থেকে তেল কম বের হয়। বয়স্ক লোকেরা তাই এই সময় সপ্তাহে ১-২ বার শ্যাম্পু করবেন।
২) চুলের ধরন দেখে সঠিক শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার (perfect shampoo and conditioner) ব্যবহার করুন-
• আগেই বলেছি অনেকেরই চুলে রং করার অভ্যাস থাকে। তাঁরা এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে রং করা চুল বা ‘কালার ট্রিটেড হেয়ারে’র জন্য(for colour treated hair)।
• চুলে রং (hair dye)করার অভ্যেস আছে অথচ চুলের স্বাস্থ্য ততটা ভালো নয়, সেক্ষেত্রে সঙ্গে রাখুন ২ ইন ১ শ্যাম্পু। অর্থাৎ যে শ্যাম্পুর সঙ্গে কন্ডিশনার থাকে সেই শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার পরেও মাথায় কন্ডিশনার লাগাতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, কন্ডিশনার কখনই চুলের গোড়ায় লাগাবেন না।
৩) শ্যাম্পু করুন স্ক্যাল্পে-
যত্ন নিয়ে মাথা পরিষ্কার করুন। বিশেষ করে চুলের গোড়ায় শ্যাম্পুর সাহায্যে আঙুল দিয়ে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। শ্যাম্পু চুলের আগার দিকে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহারের দরকার নেই। চুলের অগ্রভাগের দিকে অতিরিক্ত শ্যাম্পু দিলে তা ম্যাড়মেড়ে বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
৪) শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার লাগান-
শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুলে জেল্লা আসে। চুল চকচক করে। আরও একটা বড় ব্যপার হল, কন্ডিশনার কিছুটা হলেও ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে চুলকে রক্ষা করে।
৫) গোড়ায় নয় কন্ডিশনার-
স্ক্যাল্পে বা চুলের গোড়ায় একেবারেই কন্ডিশনার লাগানো যাবে না। বরং তা লাগাতে হবে চুলের আগার দিকে। চুলের গায়ে। মোট কথা শ্যাম্পু ব্যবহারের ঠিক উলটো হল কন্ডিশনার ব্যবহারের পদ্ধতি।
৬) স্টাইলও চাই, স্বাস্থ্যও চাই-
হেয়ার কালার : সাধারণত চুলে কালো, বাদামি রং ব্যবহার করেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে এখন লাল, সবুজ, হলুদ এমনকী সাদা রঙের ব্যবহারও করা হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে চুলের রং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তবে রঙের প্রভাবে চুল রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয় পড়ে। তাই একমাত্র সতর্কতাই পারে চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে।
মনে রাখবেন, আপনার চুলের যা রং-সেই রঙেরই তিনগুণ ঘন হেয়ার ডাই ব্যবহার করুন। অর্থাৎ চুলের রং কালো হলে, যদি আপনার চুলের রঙের চাইতেও ঘন কালো রং ব্যবহার কারেন, সেক্ষেত্রে চুলের বেশি ক্ষতি হয় না। বরং বেশি ক্ষতি হয় চুলে হালকা রং ব্যবহার করলে। অর্থাৎ কালো চুল বাদামি করলে বা সাদাটে করলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই বেশি হয়। কারণ যত বেশি চুলের রং হালকা করবেন, তত বেশি পরিমাণে পারঅক্সাইড লাগবে। এই রাসায়নিকটিই চুল ভঙ্গুর এবং রুক্ষ করে তোলে।
চুলে রং করার আগের রাতে ‘ডাই’ (dye) কানের পিছনে লাগান। যদি জায়গাটি লাল হয়, চুলকায় তবে ওই ‘ডাই’ বা হেয়ার কালারে আপনার অ্যালার্জি আছে। সেক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। প্যাচ টেস্ট করে তিনিই আপনার সঠিক হেয়ার ডাই নির্বাচন করতে সাহায্য করবেন।
কোঁকড়ানো চুল : এছাড়া সোজা চুল কোঁকড়ানো করে ঢেউ খেলাতেও পছন্দ বহু মানুষের। এতেও চুলের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। তাই চুল কোঁকড়ানো করলেও চুল রক্ষা করার উপায়ও জানতে হবে।
■ কেমন করে?-
রোদ: সূর্যের রশ্মিতে থাকে আলট্রাভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মি যা চুলের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর। রোদে চুল শুকনো, রুক্ষ, দুর্বল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে চুলে রং করা অথবা সোজা চুল কোঁকড়ানো করা হলে রৌদ্রে চুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই বাইরে বেরলে মাথার ওপর ছাতা খুলতে ভুলবেন না।
হেয়ার স্ট্রেটনিং
হেয়ার স্ট্রেটনিং, পার্মিংকে (কৌকড়া করা) বলা হয় কেরাটিন ট্রিটমেন্ট। আয়রনের মতো হেয়ার স্ট্রেটনার এবং ফর্ম্যালডিহাইড ব্যবহার করে চুল সোজা বা কোঁকড়ানো করা হয়। ফর্মালডিহাইডের ব্যবহার করলে চুল সোজা থাকে মোটামুটি পাঁচমাস পর্যন্ত। তবে সবসময়ই ফর্ম্যালডিহাইড চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে তীব্র ক্ষতিকর। যাঁরা হেয়ার স্ট্রেটনিং করেন তাঁরা কয়েকটি বিষয় থেকে সাবধান থাকবেন-
ক) ফর্মালডিহাইড অস্বস্তিকর রাসায়নিক যা চোখ, ফুসফুস এবং নাকের পক্ষে ক্ষতিকর।
খ) এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য নেই যা থেকে বলা যায়, কেরাটিন ট্রিটমেন্টের দ্বারা চুল গোড়া থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে ফর্মালডিহাইডকে চুলের গায়ে আটকে দেওয়ার জন্য আয়রনের ব্যবহার করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় চুলের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
•এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো, ‘হেয়ার স্ট্রেটনিং’ পদ্ধতিতে যে রাসায়নিকগুলি ব্যবহার করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে কম ক্ষতিকর হল অ্যামোনিয়াম বাই সালফাইড বেসড ক্রিম (যে ক্রিমে অন্যান্য উপাদানের তুলানয় অ্যামোনিয়াম বাই সালফাইডের পরিমাণই বেশি)। কিন্তু ফর্ম্যালডিহাইডের তুলনায় অ্যামোনিয়াম বাই সালফাইড খুব বেশিদিন ধরে চুল স্ট্রেট রাখতে পারে না।
চুলে হিট বা তাপ-
এখন তো অনলাইনেও হেয়ার ড্রায়ার, ফ্ল্যাট আয়রন, কার্লিং আয়রন কেনা যাচ্ছে। ঘরে ঘরে এই যন্ত্রগুলি পাওয়া যায়। মুশকিল হল, যন্ত্রগুলি ঘন ঘন ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়-
ক) চুলের জন্য বিশেষ ‘হিট প্রোটেকট্যান্ট গ্রে (তাপ নিরোধক স্প্রে)’ পাওয়া যায়। এগুলি সরাসরি চুলে স্প্রে করে তারপর হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন ব্যবহার করা দরকার। আসলে এই ধরনের স্প্রেগুলিতে পলিমার ও সিলিকন থাকে যা তাপ থেকে চুলকে রক্ষা করে। এছাড়া আরও কতকগুলি বিষয় আছে যা মাথায় রাখলে মাথার চুল অতিরিক্ত তাপ থেকে বাঁচতে পারে।
খ) সবচাইতে কম তাপমাত্রায় সেট করে তারপর ড্রায়ার, আয়রন ইত্যাদি যন্ত্র গুলি ব্যবহার করুন।
গ) ঠিক যতটুকু দরকার ততটুকু সময়ই আয়রন, ড্রায়ার চুলের সংস্পর্শে রাখুন। মনে রাখবেন যত বেশিসময় ধরে এগুলি চুলের সংস্পর্শে থাকবে, ততক্ষণই ক্ষতি করে যাবে।
ঘ) চুলের গোড়া থেকে ৬ ইঞ্চি ছেড়ে হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন ব্যবহার করুন। আর পারলে, স্নানের পর ড্রায়ারের বদলে ফ্যানের হাওয়ায় চুল শুকিয়ে নিন না। ড্রায়ার যত কম ব্যবহার করা যায় ততই মঙ্গল। ৬) আর একটা বিষয় হয় চুলের আর্দ্রতা বজার রাখা। মাঝেমধ্যে চুলে জলের স্প্রে দিন। মাথায় ভিজে তোয়ালে জড়িয়ে রাখতে পারেন। এতে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
৭) খুশকি তাড়ান-
খুশকি একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্যা থেকে দূরে থাকতে- ক) কিটোকোনাজল বা কোলটারযুক্ত মেডিকেটেড শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। শ্যাম্পু ব্যবহারের দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে উপকার পাওয়া যায়। প্রথমে রোজ শ্যাম্পু করতে হবে। উপসর্গ কমে আসলে একদিন অন্তর। এরপর সপ্তাহে দু’তিন বার শ্যাম্পু করলেই চলে।
খ) স্টেরয়েড যুক্ত লোশন, ওষুধ সরাসরি স্ক্যাল্পে ব্যবহার করা যায় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে।
গ) মাথায় খুশকি থাকলে একেবারেই তেল ব্যবহার করা যাবে না।