প্রথমেই একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো, বেশ কিছু ওষুধ ঘরে রাখা যায় ঠিকই, তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মোটেই খাওয়া উচিত নয়। তবু, ডাক্তারের অভাব বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অভাবের জন্য রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হেতু কিছু ওষুধপত্র ঘরে রাখা প্রয়োজন। সাধারণ কাটাছেঁড়ার জন্য অ্যান্টিসেপটিক লোশন, মলম, ব্যান্ডেজেনা মতো কিছু ওষুধ ঘরে থাকলে প্রাথমিক বিপদ কাটানো সম্ভব হতে পারে।
• প্যারাসিটামল: ওষুধটি ব্যথা এবং জ্বর কমাতে কাজে আসে।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২ গ্রাম প্রতি দিন ওষুধটি খাওয়ানো যায়। হঠাৎ করে রোগীর চরম জ্বর এলে প্রাথমিকভাবে প্যারাসিটামল খাইয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এনে রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। মনে রাখবেন প্যারাসিটামল চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত খেলে তা লিভারের চরম ক্ষতি করে।
আবার আগে থেকেই রোগীর লিভারের সমস্যা থাকলে জ্বর আসা মাত্র প্যারাসিটামল খাওয়াবেন না। আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
• নন স্টেরয়েডাল অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ড্রাগ (NSAIDS):
সাধারণ ব্যথা কমাতে, পেশিতে টান ধরলে, প্রস্রাবের সময় জ্বালা (রেনাল কোলিক), মেনস্ট্রুয়েশনের হলে তা কমাতে সাহায্য করে ওষুষটি। উদাহরণ
হিসাবে আইবুপ্রফেন, ডাইক্লোফেনাক-এগুলির নাম করা যেতে পারে।
তবে ওষুধটি থেকে অ্যাকিউট গ্যাস্ট্রাইটিসের সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অ্যান্টাসিডের সঙ্গে ওষুধটি খেতে হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করে ওষুধটি খাওয়া উচিত নয় একেবারেই। প্রাথমিকভাবে একটা ডোজ রোগীকে খাওয়াতে হলেও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতেই হবে।
ট্যাবলেট এবং মলম (জেল) দু’ভাবেই পাওয়া যায় ওষুধটি। তবে যাঁরা পেপটিক আলসার এবং দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা কোনওভাবেই ওষুধটি ব্যবহার করবেন না।
• অ্যান্টি হিস্টামিন: রাইনাইটিস, বিজগুড়ি, অ্যালার্জি দেখা দিলে ওষুধটি খাওয়ানো হয়। ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয় হিসাবে তন্ত্রাচ্ছন্নভাব দেখা দেয়। তবে সের্দিরবাইন, লোরাটাভাইন-এর মতো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলক কম।
এই ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। একটানা নিজে নিজে কখনই খাবেন না।
• অ্যান্টাসিড: ভুড়িভোজের পরে হজমের
গোলমাল, পেট আইঢাই করছে, বুক জ্বালা করছে এমন অবস্থায় পড়ে অ্যান্টাসিড খায়নি এমন বাঙালি নেই। আবার প্রতিদিন খাবার পর একটা করে অ্যান্টাসিড খান এমন লোকও আছেন। সোডিয়াম বাইকার্বনেট, অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড, ওমেপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল ওষুধগুলি সাধারণভাবে খেয়ে থাকেন সাধারণ মানুষ। মনে রাখবেন সামান্য পেট আইচাই করল বলে সাধারণভাবে একবেলা বা দু’বেলার জন্য ওষুধ খেলে তাও মাফ করা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুষগুলি খেলে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি, সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এবারেও তাই একই সতর্কবাণী, প্রাথমিকভাবে ওষুধ খাওয়ার পরে শারীরিক সমস্যা দূর না হলে চিকিৎসকের পারমর্শ অবশ্যই নিন।
• অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম: কেটে গিয়েছে,
ঘা হয়েছে, পুড়ে গিয়েছে এই অবস্থায় ক্ষতস্থানে ফ্রামাইসেটিন সালফেট ক্রিম মলম লাগানো যেতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে। ওষুধ লাগানোর পরেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।
• হাইড্রোকটিসন ক্রিম: দাদ, পোকায়
কামড়ালে, অথবা একজিমায় কাজ দেয় ওষুধটি। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে এবং খুব সমস্যা না হলে নিজে থেকে ব্যবহার করবেন না। হিতে
বিপরীত হতে পারে।
• আইসোসরবিড ডিনাইট্রেট: বুকে ব্যথা
যা সাধারণ গ্যাস অম্বলের মতো ব্যথা নয় এমন হলে (হার্ট অ্যাটাক) আইসোসরবিড ডিনাইট্রেট ওষুধটি রোগীর জিভের তলায় দিয়ে দিন। এরপর যত জলদি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালের এমার্জেন্সিতে নিয়ে যান।
মনে রাখবেন ওষুষের প্রভাবে রোগীর মাথা যন্ত্রণা এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেবে।
আর সম্ভব হলে ওষুবটি খাওয়ানোর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে অতি অবশ্যই পরামর্শ করুন। তবে বাড়িতে চল্লিশোর্ধ মানুষ থাকলে ওষুধটি ঘরে অবশ্যই রাখা যেতেই পারে।
• এনজাইম ট্যাবলেট, ক্যাপসুল এবং টনিক: বদহজমে এনজাইম ট্যাবলেট একটা খাওয়া যেতে পারে।