মাথা যন্ত্রণা যেন মাথা ব্যথার কারণ না হয় ?

 মাথা যন্ত্রণা কী কী কারণে হয়?

অনেক কারণে মাথার যন্ত্রণা হতে পারে। কোনও রোগের কারণে যেমন হতে পারে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে আবার স্বয়ং মাথা যন্ত্রণাই একটি রোগ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। সেই জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রে মাথা ব্যথাকে, প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি হেডেক, এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।

প্রাইমারি হেডেক হল যেখানে মাথা যন্ত্রণাটাই একটি রোগ। যেমন- মাইগ্রেন, ক্লাস্টার হেডেক, টেনশন টাইপ হেডেক এবং সাইকোজেনিক হেডেক। এখানে ‘মাথা যন্ত্রণা’ হওয়াটাই মূল সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। অন্যদিকে মস্তিষ্কের কোনও জটিল রোগের কারণে যখন মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়, তখন তাকে সেকেন্ডারি হেডেক হিসাবে গণ্য করে থাকেন চিকিৎসকেরা। প্রসঙ্গত, ব্রেন টিউমার, টিবি, মেনিনজাইটিস, এনসেফেলাইটিস, আর্টারিও ভেনাস ম্যালফাংশন, ব্রেনে জল জমার মতো রোগ হলে অনেক সময়ই মাথা যন্ত্রণা হওয়ার মতো লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে।

 কোনটা প্রাইমারি আর কোন ব্যথাটা সেকেন্ডারি হেডেক বোঝা যাবে কীভাবে?

কতকগুলি লক্ষণ দেখে মাথা যন্ত্রণার প্রকৃতি বোঝা সম্ভব। যেমন, সেকেন্ডারি কারণে মাথা যন্ত্রণা হলে দিনের কোনও নির্দিষ্ট সময় মাথা ব্যথা হবে, রাতে ঘুমানোর সময় মাথা যন্ত্রণার কারণে ঘুম ভেঙে যাবে অথবা ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা করবে,  হাঁচলে বা কাশলে মাথা যন্ত্রণা শুরু হবে, মাথা ব্যথার সঙ্গে হাতে-পায়ে জোর কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে গাওয়া সহ আরও নানা রকমের নিউরো ডেফিসিট হতে পারে। সর্বোপরি কোনও জটিল রোগের কারণে মাথা যন্ত্রণা হলে তা শুরু হবে হঠাৎ করেই এবং তারপর থেকে প্রায়ই হতে থাকবে।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে মাথা ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু কোনও ধরনের নিউরো ডেফিসিট বা অন্য কোনও সমস্যা নেই। সেক্ষেত্রে এই মাথা যন্ত্রণাকে প্রাইমারি হেডেক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। প্রাইমারি হেডেক ততটা ভয়ঙ্কর নয়। তবে এক্ষেত্রে অনেক দিন পর্যন্ত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়। নির্দিষ্ট চিকিৎসা করালে রোগী অনায়াসেই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

প্রাইমারি হেডেকের চিকিৎসা কী?

 কী রোগ হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। যেমন,

মাইগ্রেন: এই রোগের লক্ষণ হল-

• মাথার একদিকে অথবা দু’দিকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা করবে। সেই সঙ্গে চোখের পিছনেও প্রচণ্ড ব্যথা হাবে মাথা ‘দপদগ’ করবে

• বমি হবে, আলো একেবারে সহ্য হবে না ঠান্ডা ভালো লাগবে, গরম নয়।

চিকিৎসা: মাইগ্রেন অ্যাটাকের সময় যন্ত্রণা কমাতে রোগীকে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি মেডিসিন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মাইগ্রেনের তীব্রতা কমাতে কিছু প্রিভেনটিভ মেডিসিনও দেওয়া হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, চিজ, পনির, মাখন, ম্যাগি, চকোলেট, কফি এবং চাউমিন খেলে মাইগ্রেন অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই মাইগ্রেন রোগীকে এইসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

ক্লাস্টার হেডেক- এই রোগে একটানা অনেকদিন মাথা যন্ত্রণা হয় না। বরং কয়েকদিন প্রচণ্ড যন্ত্রণা হওয়ার পর একদিন হঠাৎ করেই ব্যথাটা কমে যায়।তবে কিছুদিনের ব্যবধানে ব্যথাটা পুনরায় ফিরেও আসে। যখন ব্যথা হয়, তখন তা তীর আকার ধারণ করে। এই রোগে সাধারণত মাথার একদিকে ব্যথা হয় এবং দিনে তিন থেকে পাঁচবার রোগীকে সন্ত্রণার শিকার হতে হয়। ক্লাস্টার হেডেকের সমস্যায় নির্দিষ্ট কয়েকটি স্টেরয়েড বেশ ভালো কাজ দেয়। প্রসঙ্গত, এই রোগে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

টেনশন টাইপ হেডেক: মাইগ্রেনের মতই এটিও একটি রোগ। তবে এই অসুখের সঙ্গে কিন্তু টেনশনের কোনও সম্পর্ক নেই। লক্ষণ হল পুরো মাথা জুড়ে ব্যথা হবে • যন্ত্রণার সময় মনে হবে কেউ যেন মাথাটা চেপে ধরে রয়েছে প্রায় প্রতিদিনই মাথা ব্যথা করবে।

চিকিৎসা: রোগের প্রকোপ কমাতে অ্যান্টি ডিগ্রেশন ড্রাগ দেওয়া হয়ে থাকে। সাইকোজেনিক হেডেক।বাচ্চা এবং মধ্যবয়সি মহিলাদের এই রোগ বেশি হয়। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে মূলত স্ট্রেসের কারণেই এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাস্তবে কিন্তু মাথা ব্যথা হয় না। তবে রোগীর মনে হয় সব সময়ই যেন তার মাথা ধরে রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নির্দিষ্ট চিকিৎসা করালে সাইকোজেনিক হেডেক থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

• সেকেন্ডারি হেডেকের চিকিৎসা-

• মাথা ব্যথার কারণ জানতে এক্ষেত্রে প্রথমেই এম আর আই করা হয়। প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে লাম্বর পাংচার টেস্ট করাও হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের পর সেই মতো চিকিৎসা করালে ধীরে ধীরে মাথা ব্যথা কমতে শুরু করে। যেমন; ব্রেন টিউমারের সমস্যায় অপারেশন করার প্রয়োজন পড়ে। আবার ইনফেকশনের ক্ষেত্রে সংক্রমণের কারণ জেনে সেই মতো চিকিৎসা করা হয়। আর্টারিও ভেনাস ম্যালফাংশনের সমস্যায় এন্ডোভাসকুলার সার্জারি করার প্রয়োজন পড়ে।

• মাথার ব্যথার সঙ্গে চোখেও অনেক সময় ব্যথা হয়। কী কারণ এর জন্য দায়ী?

• মাইগ্রেন অ্যাটাক হলে চোখের পিছনে ব্যথা হয়। এছাড়াও অপটিক নিউরাইটিস নামক একটি চোখের সমস্যা হলেও অনেক সময় চোখে ব্যথা হতে পারে। এই রোগে চোখের নার্ভে ইনফ্লেমেশন হওয়ার কারণে মণি নাড়ালেই ব্যথা শুরু হয়। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে রোগীর দৃষ্টি শক্তিও কমতে শুরু করে।

মাথার পিছনে ব্যথা কী কী কারণে হয়?

 মাইগ্রেন এবং টেনশন টাইপ হেডেকের কারণে মাথার পিছনে যন্ত্রণা হতে পারে। তবে, অনেক দিন ধরে জ্বর, সেই সঙ্গে ঘাড়ে এবং মাথার পিছনে ব্যথা হলে ধরে নেওয়া হয় রোগী মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু টেস্ট করে চিকিৎসকেরা এই ব্যপারে নিশ্চিত হন।

 মাথার মাঝখানে যন্ত্রণা হওয়া কি জটিল কোনও রোগের লক্ষণ?

একেবারেই না। মাথার মাঝখানে ব্যথা হওয়াটা অনেকাংশেই সাইকোজেনিক হেডেক। ঘুম থেকে ওঠার পরে অনেকেরই প্রতিদিন মাথার যন্ত্রণা হয়।

কোনও রোগের কারণে কি এমনটা হয়ে থাকে ?

অবশ্যই। আরলি মার্নিং হেডেক খুবই চিন্তার বিষয়। এই ধরনের মাথা ব্যথাকে সাধারণত সেকেন্ডারি হেডেক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। তাই প্রায়ই যদি ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা ব্যথা হয় তাহলে সময় নষ্ট না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে যাদের হাঁপানির সমস্যা আছে তাদের মধ্যে অনেকেরই রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না। ফলে সকালের দিকে মাথা ধরে। এদের ক্ষেত্রে চিন্তার কোনও কারণ নেই।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে?

মাথা যন্ত্রণা একটা নির্দিষ্ট ধরন মেনে হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই মাথা যন্ত্রণা হলে ব্যথার ওষুধ খেয়ে নি। এতে সাময়িক আরাম পেলেও মূল সমস্যাটা জটিল হতে শুরু করে। তাই মাথা ব্যথা হলে মুড়িমুড়কির মতো ব্যথা কমার ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের নির্দেশ মতো চিকিৎসা শুরু করা বাঞ্ছনীয়।

মাথা যন্ত্রণার সময় সাময়িকভাবে আরাম পেতে কী করা যেতে পারে?

ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আর অন্য কোনও ওষুধ খাওয়া একেবারেই চলবে না। আর ব্যথা কমলে যাত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।