হার্নিয়া, হাইড্রোসিল বা অ্যাপেনডিসাইটিস- কেন হয়, কি এর লক্ষ্মণ, এর চিকিৎসাই বা কি – জেনে নিন

হার্নিয়া

পেটের ভিতরের খাদ্যনালী বা অন্য কোনও অঙ্গ পেটের দুর্বল স্থান দিয়ে বাইরের দিকে চলে আসলে তাকেই হার্নিয়া বলে।

হার্নিয়া কেন হয়?

পেটের দেওয়ালই পেটের ভিতরের সব অঙ্গকে ধরে রাখে। অ্যাবডোমিনাল ওয়ালের দুর্বলতাই হার্নিয়ার কারণ। দূর্বলতার পিছনে নানা কারণ দায়ী-

(১) জন্মগত

(২) অপারেশন, আঘাত এবং সংক্রমণ।

সবচেয়ে বেশি যে হার্নিয়া হয়-

(ক) ইনগুইনাল হার্নিয়া এবং

(খ) ইনসিসনাল হার্নিয়া বা অপারেশনের জায়গায় হার্নিয়া।

ইনগুইনাল হার্নিয়া সাধারণত হয় কুচকির কাছাকাছি। তবে পেটের ওপরেও হতে পারে। যে কোন বয়সেই এ রোগ হতে পারে। পুরুষদেরই এই সমস্যা বেশি হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর হাঁটা-চলা করতে, ভারী জিনিস ওঠালে, হাঁচি বা কাশি হলে কুচকির ওপরে বা পেটের ওপরে গোলাকার বলের মত অংশ ফুলে ওঠে। রেস্ট নিলে কিছু বোঝা যায় না। মাঝে মাঝে ব্যথা হয়। এভাবে ফোলাটি বড় হতে থাকে। হালকা চাপ দিলে ফোলাটি ভিতরে ঢুকে যায়। তারপর ধীরে ধীরে গোলাকার বা পটলের মতো অংশটি ফুলেই থাকে, চাপ দিলেও ভিতরে ঢোকে না। এই পর্যায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বমি, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠবদ্ধতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ইনসিসনাল হার্নিয়া—

অপারেশনের পর ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হালে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। ইনসিসনাল হার্নিয়ার উপসর্গ ইনগুইনাল হার্নিয়া রোগীর মতোই।

চিকিৎসা কী?

হার্নিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে গেলে সার্জারি মাস্ট। মেস লাগিয়ে সার্জারি করতে হয়। মেস হল একধরনের জাল। পেটের দুর্বল অংশে জালটি লাগানো হয়। ফলে পেটের দূর্বল অংশ থেকে পেটের ভিতরের অঙ্গটি বেরিয়ে আসে না। তবে সমসময় যে অপারেশন করা হয় এমন নয়। রোগীর বেশ বয়স হয়ে গেছে, কাটাছেঁড়ায় সমস্যা হতে পারে, অথচ হার্নিয়াটাও খুব বড় নয়, তখন অবশ্য আমরা সার্জারির দিকে যাই না। রোগীকে অবজার্ভে রেখে দেওয়া হয়। কিন্তু সাধারণত হার্নিয়া ফেলে রাখা হয় না। এতে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।

অপারেশনের পরে বিধিনিষেধ?

পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনযাপনে যেতে সময় লাগবে, সেটা তো জানা কথাই। কিন্তু আজকাল আর সেভাবে বিধিনিষেধ কিছু রাখা হয় না। কেবল রোগীকে দেখতে হবে কোনও কিছু করতে গিয়ে ব্যথা লাগছে কিনা। যদি না লাগে, তাহলে সেটা করাই যায়। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। তাই খুব মশলাদার খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

হাইড্রোসিল

স্ক্রোটামে আঘাত, জীবাণু সংক্রমণের কারণেও এই অসুখ হতে পারে।

কী হয়?

 স্ক্রোটামের দুটি পর্দা আছে। এগুলির নাম নাম টিউনিকা ভেজাইলেনিস এবং অপরটি হল টিউনিকা এলবুজিনিয়া। এই পর্দা দুটি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় এক প্রকার জলীয় পদার্থ নিঃসৃত হয়। ফলে দুটি পর্দা একসঙ্গে জুড়ে যায় না। কোনও কারণে জলীয় পদার্থ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হলে তা ওই পর্দা দুটির মাঝে জমতে থাকে। ক্রমশ জলীয় পদার্থ জমা হয়ে স্ক্রোটামটি ফুলে যায়।

এছাড়া আরও একধরনের হাইড্রোসিল হয় যার সঙ্গে পেটের গহ্বরের সঙ্গে যোগ থাকে। উদর গহ্বরের তরল পদার্থ হাইড্রোসিল গলিতে জমা হতে থাকে।

হাইড্রোসিলের ক্ষেত্রেও কি সার্জারি করতেই হবে?

আগে আলট্রাসাউন্ড করে দেখে নিতে হবে, টেস্টিসের ভেতরে টিউমার আছে কিনা। যদি না থাকে সেক্ষেত্রে অপারেশন না করেও থাকা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই হাইড্রোসিলের রোগী অপারেশন না করেই দিব্যি থাকেন। কিন্তু রোগী যদি কমবয়সি হয়, সেক্ষেত্রে  অপারেশন করে নেওয়াই ভালো।

কীভাবে হয় হাইড্রোসিল অপারেশন?

আগেই বলেছি টেস্টিসের বাইরে দুটো স্তর থাকে। সেই স্তর দুটির মধ্যে জল জমে যায়। অপারেশনের সময় ওই স্তর দুটিকে কেটে উলটো করে সেলাই করে দেওয়া হয়। ফলে আর ফ্লুইড জমতে পারে না। এই অপারেশন করার জন্য অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। শরীরের নিম্নাংশ অবশ করে অপারেশন করা হয়।

অ্যাপেনডিসাইটিস

ক্ষুদ্রান্ত্র যেখানে বৃহদান্ত্রের সঙ্গে মিশেছে, সেখানে একটি চওড়া অংশ আছে। একে বলে সিকাম। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে একটি উপাঙ্গ বা ভার্মিফর্ম অ্যাপেনডিক্স। এটির মুখে থাকে একটি ভালভ। এই ভালভ থাকে বলেই খাদ্য অ্যাপেনডিক্সে প্রবেশ করে না। কিন্তু কোনওভাবে অ্যাপেডিক্সের মধ্যে মল, মাছের কাঁটা, ছোট হাড়ের টুকরো ইত্যাদি প্রবেশ করলে সংক্রমণ হয়ে যায়। এই রোগের নামই অ্যাপেনডিসাইটিস। বি-কোলাই, কোলাই ব্যাসিলাস, স্ট্যাফিলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকাস, প্রোটিয়াস ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া হল এই • রোগের পিছনে দায়ী থাকে।

চিকিৎসা?

চিকিৎসার আগে দরকার রোগটি সঠিকভাবে নির্ণয় করা। অ্যাপেনডিসাইটিসের ডায়াগনসিস খুব জরুরি। অনেক সময়ই দেখা যায়, রোগীর পেটের ডানদিকে ব্যথা করছে, এটা দেখেই সার্জারি করে অ্যাপেনডিক্সটা বাদ দিয়ে দেওয়া হল। কিন্তু কিছুদিন বাদেই রোগীর আবার ব্যথা শুরু হলে বোঝা যায়, সমস্যাটা অ্যাপেনডিক্সের জন্য হচ্ছিল না। তবে ব্যথাটা নাভি থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে ডানদিকে গেলে সেটা অ্যাপেনডিক্সেরই লক্ষণ বলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সঠিক ভাবে ডায়াগনসিস খুব প্রয়োজনীয়। বিশেষত মহিলাদের পেটের ডানদিকে ব্যথা হওয়ার আরও কারণ রয়েছে।

ব্যথা ছাড়া অ্যাপেনডিসাইটিসের আর কী

লক্ষ্মণ থাকতে পারে?

বমি বমি ভাব, খিদে কমে যাওয়া।

অ্যাপেনডিসাইটিস ফেলে রাখলে কী সমস্যা হতে পারে?

সংক্রমণ হয়ে সেটা ছড়িয়ে গিয়ে বড় বিপদ হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করিয়ে নিতে হবে।

 যে কোনও সার্জারির সাফল্যের হার কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সার্জেনের দক্ষতা। তিনি ওপেন করুন বা ল্যাপেরোস্কোপি, সার্জেনের অভিজ্ঞতাটা খুব দরকারি। তিনিই ঠিক করবেন, কোন অপারেশন করবেন।

আজকাল দেখা যায়, অনেকেই অনভিজ্ঞতার ফলে ল্যাপেরোস্কপির উপরেই জোর দেন। কিন্তু রোগীর কন্ডিশন দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। পাশাপাশি রোগীর পজিটিভ থাকাটাও খুব দরকার। নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে থাকলে সেই রোগীর সুস্থ হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে।