নি-রিপ্লেসমেন্ট -কেন-কখন -কিভাবে (জানতে সবটা পড়ুন)

কখন দরকার নি-রিপ্লেসমেন্ট?

মূলত বয়স, অস্টিওআথ্রাইটিস, রিউম্যাটয়েড আথ্রাইটিসের কারণে বহু রোগীর হাঁটুর কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। হাঁটুর কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে চিকিৎসক রোগীকে ওষুধ খাওয়া, ব্যায়াম করা, ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পরামর্শ দেন। এতেও কাজ না হলে তখনই নি- রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়।

আসলে আমরা যখন হাঁটি, তখন দুটি হাড়ে ঘযা লাগে। হাঁটুর জোড়ে থাকে ঘর্ষণ রোধকারী কার্টিলেজ বা তরুণাস্থিগুলি।এই তরুণাস্থিগুলি দিয়েই হাঁটুর জোড়ের অংশটি ঢাকা থাকে। এগুলি নষ্ট হলে হাঁটুর জোড়ের হাড়গুলি অনাবৃত হয়ে পড়ে। দুটি হাড়ের মধ্যে ঠোকাঠুকিতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। শুরু হয় প্রবল ব্যথা। অবহেলা করলে হাড়ের ক্ষয় বাড়তে থাকে। মূলত বয়সজনিত কারণে এবং অস্টিওআথ্রাইটিস হলে তরুণাস্থিগুলি ক্ষয় হতে থাকে। কোনওভাবেই ক্ষয় রোধ করা না গেলে হাঁটু চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ে তখনই, নি-রিপ্লেসমেন্টের দরকার পড়ে।

কীভাবে করা হয় নি-রিপ্লেসমেন্ট?

হাঁটু যাতে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয় নি-রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হাড়ের অংশটি সরিয়ে সেখানে কৃত্রিম অঙ্গ বা ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে দেওয়া হয়। এই কৃত্রিম হাঁটুর অংশটিকে বলে মেটাল জয়েন্ট। বাংলায় বলা হয় ধাতব অস্থিসন্ধি। ‘বোন সিমেন্ট’ নামে বিশেষ উপাদানের সাহায্যে শরীরের আসল হাড়ের সঙ্গে লাগানো হয় মেটাল জয়েন্টটি। বোন সিমেন্ট পাউডার ও তরল দু’ রকমের হয়। দুটিকে ভালো করে মেশালে তা আঠালো পদার্থে পরিণত হয়। এই উপাদান দিয়ে ইমপ্লান্ট জোড়া হয়।

ইমপ্লান্টে কোন ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়?

প্রথমদিকে স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করা হত। তারপর এল টাইটেনিয়াম। এখন কোবাল ক্রোম অ্যালয়েড-এরও ব্যবহার হচ্ছে। তবে এখনও গবেষণা চলছে ইমপ্লান্টের উপাদান নিয়ে।

সবার জন্য কি একই ইমপ্ল্যান্ট লাগে?

না সবার জন্য আলাদা মাপের ইমপ্ল্যান্ট লাগে। অপারেশনের ভালো ফল পেতে হলে, রোগীর হাঁটুর মাপ অনুযায়ী ইমপ্লান্ট বসালে ভালো হয়। এখন কম্পিউটারের সাহায্যে রোগীর হাঁটুর ত্রিমাত্রিক ছবি তুলে রোগীর হাঁটুর প্রকৃত মাপে অনুযায়ী ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করা সম্ভব।

একবার নি রিপ্লেসমেন্ট করলে কতদিন তা স্থায়ী হয়?

মোটামুটি ২৫ বছর চালানো যায়।

নি-রিপ্লেসমেন্ট করানোর ক্ষেত্রে বয়সের কোনও বাধা থাকে কি?

এই ধরনের সমস্যা যাঁদের হয়, তাঁদের গড় বয়স প্রায় ৬০। তবে দরকার পড়লে ৩০, ৪০ বছর বয়সি রোগীরও রিপ্লেসমেন্ট করতে হয়। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম। আমরাও চেষ্টা করি ৫০ বা ৬০ বছরের আগে যাতে নি-রিপ্লেসমেন্ট না করাতে হয়।

নি-রিপ্লেসমেন্ট অপারেশন করতে কত সময় লাগে?

সব মিলিয়ে প্রায় দু’ থেকে তিন ঘন্টার ব্যাপার।

 অপারেশনের পর হাসপাতালে কতদিন থাকতে হয়?

 তিন থেকে চারদিন। অপারেশনের পরদিন প্রাথমিক চেক-আপ করিয়ে রোগীকে অল্প অল্প হাঁটানো হয়।

 অপারেশনের পর কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয়?

 ১) সাধারণত মাটিতে বসতে বারণ করা হয়।

২) ফিজিওথেরাপি করাতে হবে।

৩) নিয়মিত চেক-আপের মধ্যে থাকতে হবে।

 সার্জারির আগে পরীক্ষা?

হাঁটুর কোথায় এবং কতটা অংশে অপারেশন করতে হবে তা জানার জন্য কম্পিউটারের সাহায্যে একটা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ব্লাড সুগার, ই সি জি, ইকোর মতো সাধারণ কতকগুলি টেষ্ট করা হয়।