অ্যালার্জি কী? এবং কত ধরণের ?

অ্যালার্জি কী?

কোনও বস্তু শরীরে ঢোকার পর শরীর যদি তা গ্রহণ করতে না পারে, তাহলে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়, যার অন্যতম হল অ্যালার্জি। খাবার, ধুলো, ওষুধ থেকে শুরু করে যে কোনও কিছুর কারণে এই রোগ হতে পারে। তবে সবারই যে এই সমস্যা হবে, এমন নয় কিন্তু!

কী কী থেকে অ্যালার্জি হতে পারে?

যে যে কারণে এই সমস্যা হয়, তার অন্যতম হল-

ফুড অ্যালার্জি: যেসব খাবারের সঙ্গে শরীরের বিবাদ, সেইসব খাদ্য শরীরে প্রবেশ করা মাত্র শুরু হয়ে যায় অ্যালার্জির উৎপাত। চিংড়ি মাছ খেলে যেমন অনেকের শরীর জুড়ে আম বাত দেখা দেয়, আবার অনেকে ডিম, দুধের মতো খাবার এড়িয়ে চলতেই বেশি পছন্দ করেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সাধারণত প্রোটিন জাতীয় খাবার থেকেই অ্যালার্জির সমস্যা হয়। তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা প্রয়োজন যে গম থেকেও এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ গমে, গ্লুটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন থাকে যা অনেকের শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

লক্ষণ: খাবার খাওয়ার পর সারা গা চুলকাতে শুরু করবে ঠোঁট ফুলে যাবে জ্বর আসবে ডায়ারিয়াও হতে পারে।

ত্বক অ্যালার্জি: বিভিন্ন ধরনের ক্রিম ব্যবহারের কারণে, জনঙ্ক জুয়েলারির মতো অলংকার থেকে (কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস)অথবা অনেক সময় লেদার এক্সেসরিজ, যেমন- বেল্ট বা জুতো থেকেও ত্বকে চুলকানি হতে পারে। কাপড় কাচার সাবান থেকেও স্কিন অ্যালার্জি হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একজিমাও এক ধরনের ত্বক অ্যালার্জি।

লক্ষণ: এই ধরনের অ্যালার্জি সাধারণত সঙ্গে সঙ্গে হয় না এক্ষেত্রে সারা শরীরের পরিবর্তে নির্দিষ্ট একটি অণয়গা লাল হয়ে গিয়ে চুলকানি শুরু হয়।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস: শরীর সহ্য করতে পারে না এমন কিছু, যেমন ধূলো- বালি, আরশোলা বা ছাড়পোকার শরীরের অংশ বিশেষ, পরাগ রেণু প্রভৃতি শ্বাস- প্রশ্বাসের মাধ্যমে নাকের ভিতরে প্রবেশ করলেই মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ শুরু হয়, যা এক সময়ে পলিপে পরিণত হয়। এই ধরনের সমস্যাকেই চিকিৎসা পরিভাষায় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়ে থাকে।

লক্ষণ: ধূলোবালির মধ্যে গেলেই হঠাৎ করে হাঁচি-কাশি শুরু হবে চোখ লাল হয়ে যাবে জ্বর আসবে নাক বন্ধ হয়ে যাবে নাক দিয়ে জল পড়বে গলা চুলকাবে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস: ধুলো-বালি বা অন্য কোনও অ্যালার্জেন (যা থেকে অ্যালার্জি হয়) চোখের সংস্পর্শে এলে যে অ্যালার্জি হয়, তাকে অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস বলা হয়ে থাকে।

অনেকের ঠান্ডা জল চোখে লাগলেও এই ধরনের সমস্যা হয়।

লক্ষণ: দু’চোখ লাল হয়ে যাবে চোখ থেকে মাত্রাতিরিক্ত জল পড়বে। • ড্রাগ অ্যালার্জি: সাধারণত ব্যথা কমার ওষুধ এবং অ্যান্টিবায়োটিক থেকেই এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মুড়িমুড়কির মতো এই সব ওষুধ খেতে মানা করা হয়।

লক্ষণ: সারা শরীর লাল হয়ে গিয়ে চুলকাবে জ্বর আসবে ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে।

অ্যাজমা: এও কিন্তু এক ধরনের অ্যালার্জি। পরিবেশে উপস্থিত একাধিক খারাপ গ্যাস, যেমন-কার্বন-ডাই- অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড প্রভৃতির প্রভাবে শ্বাসনালীতে প্রতিক্রিয়া হলেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

লক্ষণ: স্বাস নিতে কষ্ট হবে বুকে চাপ বা ব্যথা হবে রাতের দিকে কাশি বাড়বে।

চিকিৎসা?

অ্যালার্জির চিকিৎসা মূলত তিনটি ধাপে করা হয়। প্রথম ধাপে রোগীর থেকে তার রোগের ইতিহাস  জানতে চাওয়া হয়। অর্থাৎ কী থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে, কখন বেশি হচ্ছে, সিজন চেঞ্জের সময় বাড়ছে কিনা প্রভৃতি বিষয় জানার মাধ্যমে অ্যালার্জির কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়। এর পর চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপে স্কিন পিক টেস্ট এবং রেডিওঅ্যালার্জেসরবেন্ট টেস্ট নামক একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে অ্যালার্জির কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া হয়। এর পর একেবারে শেষ ধাপে শুরু হয় চিকিৎসা। এক্ষেত্রে যে কারণে অ্যালার্জি হচ্ছে তা জীবন থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন ধরা যাক কারও যদি কাঁকড়া খেলে অ্যালার্জি হয় তাহলে তাকে কাঁকড়া খাওয়া ছাড়তে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসক যেসব অ্যান্টি হিষ্টুমিন ওষুধ দেবেন তা নিয়ম করে খেয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দেওয়াও হয়ে থাকে। আর যদি এইসব ওষুধে কাজ না হয় তখন হাসপাতলে ভর্তি থেকে চিকিৎসা চালাতে হয়। প্রসঙ্গত, কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসের ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষার সঙ্গে ‘প্যাচ টেস্ট’ করা হয়ে থাকে।

 ‘স্কিন প্রিক টেস্ট এবং প্যাচ টেস্ট – এই দুটি পরীক্ষা বাস্তবিকই খুব কার্যকর।

কে কোন অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হবে,  তা কোন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

জিনগত কিছু ত্রুটির কারণে জন্ম থেকেই আমাদের শরীর কিছু জিনিস গ্রহণ করতে পারে না। যার শরীর যেটা নিতে পারে না, তা শরীরে প্রবেশ করলেই নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। তাই কার কোন জিনিস থেকে অ্যালার্জি হবে তা আগে থেকে বলে দেওয়া সম্ভব নয়।

কারা বেশি আক্রান্ত হয়? যে কেউ, যে কোনও বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বাচ্চাদের মধ্যে মূলত একজিমা, কনজাংটিভাইটিস এবং অ্যাজমা, এই তিন ধরনের অ্যালার্জির প্রকোপ বেশি হতে দেখা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত মানসিক চাপ অ্যালার্জি হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ, ডিপ্রেশন এবং অ্যাংজাইটির শিকার হলে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।