পালং শাক – গুণাগুণ

স্বাস্থ্যকর শাকসবজির মধ্যে পালং- এর স্থান শীর্ষস্থানে। তবে পালং শাক যত তাজা হবে, তার গুণগত মান বেশি হবে। শাকটির জন্মস্থান নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ কেউ বলেন, আরবে এটির প্রথম চাষ হয়। কারও মতে আফ্রিকা। ইংরেজি নাম Spinach, শব্দটি এসেছে, স্পেনীয় শব্দ Hispanin থেকে। ভারতীয় পণ্ডিতগণ বলেন, চরক সংহিতা ও সুশ্রুত সংহিতা প্রভৃতিতে পালং পালক্ষ্য নামে উল্লেখিত। পরবর্তীকালের যষ্ঠ শতকের বাগভট ও একাদশ শতকের চক্রদও প্রভৃতি গ্রন্থে পালংয়ের গুণাগুণ সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। যদিও বেদ ও উপবহর্ন সংহিতাসমূহে পালংয়ের কোনও হদিশ পাওয়া যায় না। তাহলেও আড়াই-তিন হাজার বছর পূর্বের চিকিৎসা গ্রন্থ দুটিতে পালংয়ের উপস্থিতি-পালংয়ের আদি বাসস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে!

সাতের দশকে নেপাল থেকে পালংয়ের চীনে প্রবেশ কীসের ইঙ্গিত?

পালং শাক অত্যধিক পুষ্টিকর, বলকারক ও ক্যানসার প্রতিরোধক। ডজনখানেক ফ্লেভনয়েড যৌগ শাকটিতে থাকায় এটি প্রস্টেট, ব্রেস্ট, পাকস্থলী ও চামড়ার ক্যানসারকে প্রতিরোধ করতে পারে। শরীরের অন্যান্য স্থানের ক্যানসারকেও প্রতিরোধে সক্ষম। বিশেষত ক্ষতিকর প্রস্টেট ক্যানসারের যে কোনও স্টেজকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে।

শাকটিতে প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, অতি প্রয়োজনীয় কতকগুলি অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইন, ভিটামিন-এ, সি, ই, কে প্রভৃতি রয়েছে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। পালংয়ে অক্সালেট থাকায় পাথুরি, বাতরক্ত (গাউট), অস্ত্র ও যকৃতের নানাবিধ রোগের ক্ষেত্রে ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকা দরকার। অক্সালেট শরীরের আয়রন শোষণে বাধা দেয়। লেবু কিংবা লেবু জাতীয় ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে সহজেই শোষিত হয়। সেজন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় টকজাতীয় কিছু না কিছু থাকা প্রয়োজন। কেবল পালং তো নয়, বহু শাকসবজিতে এই সমস্যা থাকে। কাঁচা শাকে এক প্রকার বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে। ভালোভাবে ধুলেও নষ্ট হয় না। তাই সতেজ পালং শাক ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ সেকেন্ড ফুটিয়ে নিলে ক্ষতিকারক দ্রব্যটির বিনাশ ঘটে। এটি আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অভিমত। তাই ভারতীয়রা পালং ও অন্যান্য বহু প্রকার শাকসবজি সামান্য ভাপিয়ে জল ফেলে দিয়ে খাওয়ার বিধান দিয়েছেন। এর দ্বারা অক্সালিক/ অক্সালেট/ ইউরিক অ্যাসিড প্রভৃতির উৎপাত অনেকটাই বা পুরোটা কমে যায়। শীতের পালং বেশি উপকারী। সারা বছর যেসব পালং বাজারে আসে, তা হিমঘর থেকে আসে বা অল্পরসযুক্ত মাটিতে তৈরি পালং, না খাওয়াই ভালো।

পালং কোষ্ঠবদ্ধতা, রক্তহীনতা, জন্ডিস, রক্তদুষ্টি, রক্তপিত্ত, অরুচি, মূত্রাল্পতা, রাতকানা, উচ্চ রক্তচাপ, পাকস্থলীর ক্ষত, পেট ও ফুসফুসের অসুখ ও শ্লেষ্মার ধাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হাড়কে মজবুত ও শক্ত করে। মায়েরা গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে শাকটি খেতে পারেন। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরাও সহজে খেতে পারেন। পালং-এর ঘণ্ট, পালং- এর ছেঁচকি, ডাল পালং, পালং-এর স্যুপ প্রভৃতি রেসিপি বানিয়েও পালং খাওয়া যায়।