কয়েকটি সাধারণ সমস্যায় কীভাবে আয়ুর্বেদের ঘরোয়া চিকিৎসা করা যেতে পারে, সেটাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।
• কোষ্ঠবদ্ধতায়: প্রত্যহ বিকালে মাঝারি ধরনের একটা পাকা পেয়ারা খেলে কোষ্ঠসাফ হবে। ইসবগুলের ভুসি ৩/৪ চা চামচ সামান্য জলে গুলে রাতে ভাত বা রুটি খাওয়ার ২ ঘন্টা পূর্বে খান। তার এক ঘণ্টা পরে গ্রাসখানিক হালকা গরম জল খাবেন। তার এক ঘণ্টা পরে রাতের খাবার। এক্ষেত্রে ছোবড়া জাতীয় শাকসবজি শরীর বুঝে খেতে হবে।
• পাইলস্, ফিসার, ফিসচুলা (অর্শ, পরিকর্তিকা ও ভগন্দর): এক্ষেত্রে দাঁত পরিষ্কার রাখা প্রাথমিক কর্তব্য।
অর্শের ক্ষেত্রে- রক্ত পড়লে আয়াপান বা গাঁদাফুলের পাপড়ির শরবত খাবেন চিনি বা মিছরি দিয়ে। আয়াপানের পাতা ১৫/২০টি অথবা ৩/৪টি গাঁদাফুলের পাপড়ি। এছাড়া প্রত্যহ ৫০/৬০ গ্রাম ওল ভাতে দিয়ে প্রথম পাতে ভাতের সঙ্গে খাবেন। অর্শের জন্য আয়ুর্বেদে প্রচুর কার্যকরী ঔষধ বাজারে পাওয়া সায়। বহেড়ার ননি অর্শ ও পরিকর্তিকার (ফিসার) ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।
ফিসচুলা বা ভগন্দরের জন্য ক্ষারসূত্র চিকিৎসাই শ্রেষ্ঠ। ওষুধে না সারলে অর্শ চিকিৎসাও ক্ষারসূত্রের সাহায্যে করা প্রযেতে পারে। এই চিকিৎসা আয়ুর্বেদ হাসপাতালগুলিতে বিনামূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে করা হয়ে থাকে।
• টনসিলাইটিসে: প্রত্যহ সকালে খালি পেটে ২/৩ কোয়া রশুন চিবিয়ে খান। তারপর চা, বিস্কুট, মুড়ি প্রভৃতি খাবেন। তারপর জলখাবার। ডুমুর পাতা বা তেঁতুল পাতা সিদ্ধ করে তাতে সামান্য নুন ও ফটকিরি মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার গার্গল করুন।
• সাইনুসাইটিসে: কালোজিরা বা কপূরের নস্যি বার বার নিতে হবে। এছাড়া নিসিন্দাপাতা ৫/৬টি ৫০ গ্রাম সরষে তেলে ভেজে ঠান্ডা হলে ছেঁকে তেলটি শিশিতে রাখতে হবে। এটি দিনে ২/৩ বার নস্যির মতো ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। শাস্ত্রোক্ত ওষুধ লক্ষ্মীবিলাস রস ও যড়বিন্দু তেল ব্যবহার করতে পারেন। লক্ষ্মীবিলাস রস সকালে ও সন্ধ্যায় ১টি করে খেতে হবে মধুসহ আর তেলটি নস্যি হিসেবে ব্যবহার্য।
• নাক দিয়ে রক্তপড়া: সামান্য রক্ত পড়লে সেক্ষেত্রে দূর্বা ঘাসের ডগা ১০/১৫টি, আয়াপানের পাতা ১০/১৫টি ও কাঁচা হলুদ ৩/৪ গাঁট ভালোভাবে বেটে কাপ দেড়েক জলে মিশিয়ে তাতে চিনি বা মিছরি দিয়ে শরবত বানাবেন। তারপর ছেঁকে সেটি খেতে দেবেন। ৩/৪টি গাঁদা ফুলের পাপড়ি বেটে ওই পদ্ধতিতে শরবত বানিয়েও খাওয়া যেতে পারে। চুপচাপ শুয়ে থাকতে হবে। প্রেশার বেশি থাকলে তা কমাবার ওষুধ খেতে হবে। না কমলে সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে। তখন সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
• চিকেন পক্স বা জল বসন্তে: প্রথম ৩/৪ দিন মেথি ৮/১০ গ্রাম ও গুলঞ্চের ডাঁটা ৮/১০ ইঞ্চি কুচি কুচি করে এক গ্লাস গরম জলে রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে ছেঁকে ওই জলটি সারাদিনে ২/৩ বারে খেতে হবে। এছাড়া উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে। নিম হলুদ গায়ে পড়ার পর ১২৫ মিলিগ্রাম মাত্রায় রসসিন্দুর বা মকরধ্বজ মধু দিয়ে মিশিয়ে সকালে জল খাবারের পর ১৫/১৬ খেলে আর কোনও অসুবিধা পরে হবে না। এটি বড়দের মাত্রা।
• মুখে দুর্গন্ধ ও দাঁতের ব্যথায়: মাড়িতে ঘা হয়ে রক্তপুঁজ পড়লে মুখে দুর্গন্ধ সাধারণত হয়। তখন দাঁতে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া কেবল মাড়ি ফুললে বা দাঁত নড়লে দাঁতে ব্যথা হতে পারে। পেয়ারাপাতা ৩/৪টি ও যজ্ঞডুমুরের পাতা ৩/৪টি কুচি কুচি করে কেটে ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে আন্দাজ কাপ দেড়েক থাকতে নামিয়ে তাতে নুন ও ফটকিরি পরিমাণ মতো মিশিয়ে হালকা গরম অবস্থায় কুলি করতে হবে দিনে ২/৩ বার। চাকা খয়ের ও ফটকিরি সমভাগে নিয়ে একত্রে গুঁড়ো করে রাখুন। দিনে ২ বার হাত দিয়ে দাঁত মাজুন। এছাড়া দারুচিনির তেল লাগানো যেতে পারে।