কয়েকটি সাধারণ সমস্যায় কীভাবে আয়ুর্বেদের ঘরোয়া চিকিৎসা করা যেতে পারে, সেটাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।
• ঘামাচিতে: সহজ মুষ্টিযোগ হল- হেলেঞ্চা শাকের রস সর্বাঙ্গে মেখে শুকিয়ে নিন। তারপর স্নান করবেন। পরপর ৩/৪ দিন করা দরকার।
• আঁজনি বা আঞ্জনিতে: ঘাসের ডগা ভাঙলে যে রস বেরয়, তা দিনে ৩/৪ বার করে লাগালে উপকার হয়।
পুঁজ হলে তা বের করে সৈন্ধব লবণ ও মধু বেটে হালকা প্রলেপ।
• নখকুনিতে: মেহেন্দিপাতা সিদ্ধ জল ঘন করে মলমের মতো তৈরি করুন। এটিই দিনে ২/৩ বার লাগাবেন।
• মুখের কোণে ঘা: ভিটামিন-বি-এর অভাবেও হতে পারে। হরীতকী ঘষে সেই ঘয্য বার বার লাগাবেন। টংকন ভস্ম মধুর সঙ্গে মিশিয়েও লাগানো যায়।
• বমি হলে: সাধারণত বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হয়ে আসে। অম্ল, পেট খারাপ, অজীর্ণ, পেট ফাঁপা, বদহজমজনিত কারণে বমি বমি ভাব বা বমি হলে আমলকী ভেজানো জলে সাদা চন্দন ঘযে সেটি মাঝে মাঝে খেতে দিতে হবে।
• আমবাতে: একে চলতি বাংলায় রসবাত বলে। পরিচিত নাম রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এর জন্য নানাবিধ ওষুধের সমাহার। প্রথমের দিকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করালে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায় বা সেরেও যায়। প্রাথমিকভাবে একটা মুষ্টিযোগের কথা লিখছি- শুঁঠচূর্ণ ও গোক্ষুর চূর্ণ সমভাগে মিশিয়ে তা থেকে ৩ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে হালকা গরম জল সহ সকালে ও সন্ধ্যায় হালকা জল খাবারের পর খেতে হবে। এছাড়া জায়ফল ও কপূর মিশ্রত সরষে তেল (পূর্বে লেখা হয়েছে) দিনে ২ বার মালিশ ও সুতির কাপড়ের গরম সেঁক নেবেন।
• তোতলামিতে: হলুদের গুঁড়ো গিয়ে ভেজে রেখে দিন। তা থেকে ১-২ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে দিনে ২ বার হালকা গরম জল দিয়ে বেশ কিছুদিন খাওয়ালে তোতলামি চলে যেতে পারে।
এর দ্বারা সামান্য তোতলামি সেরে যেতে দেখা গিয়েছে।
অস্তিআর্থ্রাইটিস (বাত)-
আয়ুর্বেদে এটি বাতব্যধির অন্তর্ভুক্ত।
বাতব্যধি অনেক ধরনের হয়। উদাহরণ স্বরূপ কয়েকটির উল্লেখ করছি। যেমন- আক্ষেপণ, অপতন্ত্রক, অপতানক, পক্ষবাত, গৃর্থী (সায়াটিকা), অস্থিক্ষয় প্রভৃতি বাতব্যধিগুলো বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
আক্ষেপণ: এককথায় খিচুনি। এই অসুখে দেহ ধনুকের মত বেঁকে যায়।
অপতন্ত্রক: রোগী মুর্ছা যায়, কণ্ঠ থেকে পায়রার মতো গড়গড় শব্দ বেরয়।
অপতানক: শরীর দণ্ডের মতো শক্ত হয়ে যায়।
পক্ষবাত: শরীরের অর্ধভাগ অকম্য বা অচেতন হয়ে যায়। এইরকম সর্বাঙ্গে হলে তাকে সর্বাঙ্গ বাত বলে (প্যারালিসিস)।
গৃত্রর্থী: এই বাত প্রথমে নিতম্বে, তারপর ক্রমশ কোমর, পিঠ, উরু, জানু ও পায়ে হয়। সূচ ফোটার মতো ব্যথা হয়। অবশ লাগে।
অববাহুক: হাত নাড়াতে, তুলতে অসুবিধা হলে তাকে অববাহুক বলে (ফ্রোজেন শোল্ডার)।
হনুগ্রহ: গাল নাড়াতে অসুবিধা হলে বা মুখ খোলা-বন্ধ করতে সমস্যা হলে তাকে হনুগ্রহ (লকড-জ) বলে।
অস্টিওপোরেসিস (অস্থিক্ষয়): ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের অভাবে এই অসুখ হয়।
বাতব্যধির পথ্য: পুরাতন চালের ভাত একবেলা, রুটি একবেলা, কুলখ কলাই, মুসুর ডাল, ছাগ মাংসের স্যুপ, পটল, বেগুন, করলা, রসুন, আদা, তিল, গরম জল ও তেতো স্বাদের সবজি মানেই উপকার। এই পথ্যে হাড়ের ব্যথা কমে।
অপথ্য: কচু, ঢেঁড়শ, কলার মতো কফজনক খাদ্য না খাওয়ায় ভালো। তেল মশলাযুক্ত গুরুপাক আহার বর্জনীয়।
পুরাতন বাতে (আগ্রহিটিস) একবেলা ভাত একবেলা রুটি খেতে পারেন। এছাড়াও ওপরের বাতব্যধিতে রামাদি কাথ, এরেন্ডমূলাদি কাথ, মাসকলাদি কাথ, দশমূল কাথ।
ওষুধ-
রান্নাদি কাথ রান্না, গুলঞ্চ, সোঁদাল, দেবদারু, এরণ্ড মূল, পুনর্নবা, সমস্ত দ্রব্য মিলিয়ে পঞ্চাশগ্রাম কাথ হলে তাতে শুঁঠ চূর্ণ পাঁচ গ্রাম মিশিয়ে খাবেন।