ডিমেনশিয়া কি অনেক ধরনের হয়?
ডিমেনশিয়া অনেক ধরনের হয়। ডিমেনশিয়া মানে কিন্তু শুধু স্মৃতিভ্রম নয়। বিভিন্ন কারণবশত বিভিন্ন ধরনের ডিমেনশিয়ায় নানান রকম উপসর্গ দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অ্যালঝাইমার্স, যাতে স্মৃতিভ্রম একটা প্রধান লক্ষণ। একেক রকম ডিমেনশিয়ার প্রধান লক্ষণ একেক রকম হয়। যেমন, ব্যবহারের পরিবর্তন, সুভদ্র মানুষ হঠাৎ অশালীন কথাবার্তা বলা শুরু করলেন। কারও খুব মিষ্টি খাওয়ার লোভ দেখা দিল বা ভীষণ রকম আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন। অনেক ক্ষেত্রে লেখার, পড়ার, কথাবলার ক্ষমতা চলে যায়। কেউ হয়তো তাঁর বিশেষ একটি প্রতিভা যেমন আঁকার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেন। তাছাড়া হ্যালুসিনেশন দেখা প্রভৃতি বিভিন্ন রকম লক্ষণ হয়।
ভাসকুলার ডিমেনশিয়া কেন হয়?
কখনও কারও এটা হয় স্ট্রোকের পরে। কখনও পরপর অনেকগুলি সাইলেন্ট স্ট্রোক
(ছোট ছোট স্ট্রোকগুলি আক্রান্ত ব্যক্তি টের পান না) হওয়ার দরুন ব্রেনের ক্ষতিগ্রস্ততার ফলে হয়। স্ট্রোকের ফলে ব্রেনে রক্ত সঞ্চালন কমে গিয়ে ব্রেনকোষগুলি অক্সিজেন ও নিউট্রিয়েন্সের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেখা দেয় ভাসকুলার ডিমেনশিয়া।
ভাসকুলার ডিমেনশিয়ার লক্ষণ কী?
এই রোগের লক্ষণ হঠাৎই দেখা দেয়, অন্যান্য ডিমেনশিয়ার মতো ধীরে ধীরে নয়। হঠাৎই মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতার অবনতি হয়। একে Multi-infarct বা Post Stroke Demensia ও বলে। প্রথম অবস্থায় যে সব লক্ষণ দেখা দেয় সেগুলি হল-ঠিকমত চিন্তা করা, ধারণা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া বা বিচার বিবেচনা করার ক্ষমতা চলে যাওয়া, কোনও কাজের যেমন রান্নার পরের ধাপে কি করতে হবে বুঝতে না পারা। মনোসংযোগ না করতে পারা, ঠিক শব্দ খুঁজে না পাওয়া। ব্যালেন্সের অভাব, হতভম্ব হওয়া প্রভৃতি। ব্রেনের কোনও অংশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপরেও লক্ষণের পার্থক্য হয়।
কী ভাবে ভাসকুলার ডিমেনশিয়া নির্ণয় হয়?
প্রধানত, শারীরিক লক্ষণ এবং স্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষা করে এটি নির্ণয় করা হয়। তবে সব ডিমেনশিয়া নির্ণয় এই পদ্ধতিতে হয় না।
ভাসকুলার ডিমেনশিয়ার চিকিৎসা কী?
যত তাড়াতাড়ি নির্ণয় হয়, ততটাই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ব্রেনের কোষের যতটা ক্ষতি হয়েছে তা সারানো না গেলেও বিশেষজ্ঞ নিউরো চিকিৎসকের পরামর্শে আরও বেশি ক্ষতি যাতে না হয় সেটা সুরক্ষিত করা যায়। পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ যোগ্য হয়। যে সব ক্ষতিকর দিক আছে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরল প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ধূমপান, মদ্যপান প্রভৃতি বন্ধ করা জরুরি।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কি দায়ী?
স্ট্রেস সব অসুখের পক্ষেই খারাপ। ব্রেনের পক্ষে স্ট্রেস তো ক্ষতিকর বটেই। ব্রেনকে স্ট্রেসের কু-প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে এবং হাই-ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস প্রভৃতি ঝুঁকির সম্ভাবনা এড়াতে ব্রেনকে যতটা সম্ভব স্ট্রেস রিলিফ দেবার চেষ্টা করতে হবে। যেমন ভালোলাগার কাজে একটু সময় কাটানো- অর্থাৎ ছবি আঁকা, গিটার বাজানো, বাগান করা প্রভৃতি। নতুন ভাষা শেখাও মস্তিষ্কের পক্ষে খুবই ভালো।