কোলেস্টেরল কমাতে এক্সারসাইজ অবশ্যই প্রয়োজন।
কিন্তু আপনাকে এটা প্রথমেই জেনে নিতে হবে কোন ধরনের এক্সারসাইজ আপনার করা উচিত। মূলত তিন ধরনের এক্সারসাইজ রয়েছে, স্ট্রেচিং, ওয়েট লিফটিং এবং অ্যারোবিক। আর কোলেস্টেরল কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করতে হবে নিয়ম করে। এই অ্যারোবিক এক্সারসাইজের মধ্যে হাঁটা ছাড়াও পড়ছে সাঁতার কাটা, ব্যাডমিন্টন, টেনিসের মতো বিভিন্ন খেলা। তবে সব বয়সের জন্য তো সব এক্সারসাইজ ঠিক নয়। তাই বয়স অনুযায়ী এক্সারসাইজ করতে হবে। এজন্য নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ।
কোন বয়সে কেমন এক্সারসাইজ:
বয়স অনুযায়ী এক্সারসাইজ করতে হবে। যদি ৭০ বছর বয়সের কোনও মানুষ জীবনে কোনওদিন এক্সারসাইজ না করেন, তাহলে তার কোনও ধরনেরই এক্সারসাইজ করা চলবে না। আবার ২৪ বছর বয়সের যুবককে হাঁটার কথা না বলে সাঁতার কাটা, ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যই পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
আবার এমন অনেকেই থাকেন যাঁরা অল্প বয়স থেকে প্রতিদিন নিয়ম করে এক্সারসাইজ করে আসছেন। যদি তাঁরা অল্প বয়সে ওয়েট লিফটিংয়ের মতো এক্সারসাইজ করে থাকেন তাহলে বেশি বয়সে এক্সারসাইজের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হয়। আবার এক্সারসাইজের পরামর্শ দেওয়ার আগে এটাও দেখে নিতে হয় যে, সেই রোগীর অন্য কোনও রোগ রয়েছে কি না। তাহলে সেই দিকটি বিবেচনা করেই এক্সারসাইজের পরামর্শ দেওয়া হয়।
কোন বয়সে কোলেস্টেরল ধরা পড়তে পারে:
শরীরে খুব ধীরে ধীরেই কোলেস্টেরলের প্লাক তৈরি হয়। দেখা গিয়েছে, ন’বছর বয়সেও প্লাক তৈরি হতে পারে। যদি ছোট থেকেই একটি শিশুর মধ্যে এক্সারসাইজের প্রবণতা থাকে তাহলে পরে নতুন করে এক্সারসাইজ শুরু করার সমস্যাটা থাকে না। কিন্তু চল্লিশোর্ধ মানুষের হঠাৎ কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই এক্সারসাইজ করতে হবে।
কতক্ষণ হাঁটতে হবে:
দিনের মধ্যে আধঘণ্টার মতো হাঁটতে হবে। যদি একটানা হাঁটার জন্য সময় না থাকে তাহলে সকালে পনেরো মিনিট আর বিকালে পনেরো মিনিট করে ভাগ করে হাঁটতে পাবেন। তাতেও কাজ হবে। তবে প্রত্যেকদিন হাঁটার চেষ্টা করুন। যদি প্রতিদিন হাঁটার সময় না পান তাহলে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন হাঁটুন। এর থেকে কম হলে যেজন্য আপনি হাঁটছেন সেই প্রয়োজনটা মেটে না।
কতটা তাড়াতাড়ি হাঁটা জরুরি:
প্রশ্নটা আসে সকলের মনে। কীভাবে তাড়াতাড়ি হাঁটলে উপকার হবে অর্থাৎ কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
এটা বোঝার জন্য কয়েকটি সহজ উপায় রয়েছে। তার আগে জেনে রাখা ভালো যে, ডাক্তারি পরিভাষায় এই হাঁটাকে বলা হচ্ছে ব্রিস্ক ওয়াকিং। সাধারণভাবে বলতে হলে এটিকে বলা হচ্ছে মর্ডারেট ইন্টেনসিটি এক্সারসাইজ।
যদি বাইরের আবহাওয়া ঠান্ডা হয় তাহলে আপনার হাঁটায় সেই জোর থাকতে হবে যে হাঁটলে আপনার ঘাম ঝরছে। আবার যদি একটু হাঁটার পরেই দেখেন খুব ঘাম হচ্ছে তাহলে বুঝবেন হাঁটার গতি প্রয়োজনের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে। তখন সেই গতি একটু কমিয়ে ফেলতে হবে।
হাঁটার সময় হাতের পালসের গতি দ্রুত হয়। যদি পালসের গতি দ্রুত না হয় তাহলে বুঝতে হবে হাঁটায় সেই জোর নেই।
হাঁটাটা যদি সঠিক হয় তাহলে দেখবেন কথা বলতে গিয়ে আপনি একটু হাঁফিয়ে যাবেন। তবে মনে রাখবেন, আপনি যখন হাঁটছেন তখন আপনার পাশের লোকটির সঙ্গে আপনার কথা বলতে যেন কোনও অসুবিধা না হয়। যদি পাশের লোকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে খুব বেশি হাঁফিয়ে যান তাহলে বুঝতে হবে আপনার হাঁটার গতি বেড়ে গিয়েছে। তখনই গতিটা একটু কমিয়ে আনতে হবে।
হাঁটা যদি ঠিকঠাক হয় তাহলে দেখবেন আপনি সারাদিন খুব ফিট ফিল করছেন। যে কোনও কাজ খুব সহজে করতে পারছেন। কিন্তু যদি সকালে হাঁটার পর দেখেন যে আপনার কাজের গতি কমে যাচ্ছে। কাজটা ভালোভাবে করতে পারছেন না বা কিছুটা ক্লান্তি আসছে তাহলে বুঝতে হবে আপনার হাঁটার গতি খুব বেড়ে গিয়েছে বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হেঁটে ফেলছেন।
কোথায় হাঁটতে হবে:
এমন কোনও রাস্তায় হাঁটবেন না যেখানে গাড়ি বেশি চলাচল করে। এই ধরনের রাস্তায় হাঁটতে গেলে বার বার দাঁড়াতে হয়। এতে হাঁটার গতি কমে যায়। এর থেকে বরং কোনও মাঠে হাঁটবেন। এতে হাঁটার গতি ভালো থাকবে। কোলেস্টেরলকেও আপনি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন।
সাঁতার কাটুন:
কম বয়সে যদি কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি ধরা পড়ে তাহলে সাঁতার কাটার মতো অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করতে পারেন। এতে যে শুধু কোলেস্টেরলের সমস্যা কমবে তাই নয়, সেইসঙ্গে জয়েন্টের নমনীয়তাও বাড়বে। যাদের আর্থ্রাইটিসেরও সমস্যা রয়েছে তারাও সাঁতার কাটার ফলে উপকৃত হবেন।
বাড়িতে ট্রেডমিল করতে পারেন:
আজকাল অনেকেই সময় বাঁচাতে বাড়িতে ট্রেডমিল করতে চান। কোনও অসুবিধা নেই। এতেও কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। তবে মনে রাখবেন, ভালো প্যাডেড শ্যু ব্যবহার করুন। আবার ফ্ল্যাট অবস্থায় যেন ট্রেডমিল থাকে। আর বয়স যদি ৪০ বছর বা তার থেকে বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ট্রেডমিল করবেন না।
বাড়ির কাজ করলেও এক্সারসাইজের চাহিদা পূরণ হয়:
যদি বাইরে বেরিয়ে হাঁটার সময় না থাকে তাহলে বাড়ির কাজ করেও এক্সারসাইজের ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। তবে সেই কাজ কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নয়, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে কাজ করুন। আবার গার্ডেনিং বা বাগানের পরিচর্যার মাধ্যমেই কায়িক পরিশ্রম হয়।
বাড়ির মহিলাদের ওপর, কাজের লোকের ওপর বাড়ির সবকাজটুকু ছেড়ে না দিয়ে নিজেও অনেক কাজ করতে পারা যায়। তাতে বাড়ির লোকেরও মন ভালো হবে, আপনারও শরীর ভালো থাকবে।
সবশেষে বলা যায়, এক্সারসাইজ শুধু আপনার কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে না, সেইসঙ্গে ওজন কমিয়ে আপনাকে অনেক তরতাজা রাখবে। ফলে ঝসারাদিন আপনি অনেক কাজও করতে পারবেন।