গ্যাসট্রিক আলসার কি ?

গ্যাসট্রিক আলসারের অর্থ হল, পাকস্থলী, খাদ্যনালী অথবা ক্ষুদ্রান্ত্রে ঘা হওয়ার সমস্যা।

গ্যাসট্রিক আলসার হওয়া পিছনে বেশ কতকগুলি কারণ দায়ী থাকে। এগুলি হল পরিবারে আলসার হওয়ার ইতিহাস থাকলে, হেলিকো ব্যাকটর পাইলোরি নামে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে, বহুদিন ধরে ব্যথা ও ঘুমের ওষুধের অতিরিক্ত সেবন করলে, ধূমপানের অভ্যেস থাকলে, দীর্ঘসময় ধরে উপোস করার বদভ্যাস থেকে গাসট্রিক আলসার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। উল্লেখ্য, সমগ্র বিশ্বে যাঁদের এইচ পাইলোরি বহন করেন তাঁদের ২০ শতাংশের আলসার দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আলসারের উপসর্গ –

পেটে ব্যথা: সাধারণত পেটের ওপর দিকে, বুকের পাঁজরের নিচের অংশে গ্যাসট্রিক আলসারের ব্যথা অনুভূত হয়।

খিদের ব্যথা: খিদে পেলেই পেটে প্রবল সন্ত্রণা শুরু হয়। খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথা কমে যায়।

রাতে ব্যথা: গভীর রাতে পেটের ব্যথার কারণে রোগীর ঘুম ভেঙে যায়। সেই সময় অল্প পরিমাণে খাবার খেলে ব্যথা কমে যায়। মাঝে মধ্যে ব্যথা: রোগীর ব্যথার উপসর্গ সবসময় থাকে না। একটানা সাতদিন ব্যথা চলার পর কোনওরকম উপসর্গ থাকে না। আবার মাসখানেক পর শুরু হয়।

এছাড়াও বুক জ্বালা, খাদ্যে রুচির অভাব, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, রক্তবমি, খিদে না থাকার মতো উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়।

চিকিৎসা না হলে-

আলসার হওয়া মাত্র চিকিৎসা শুরু করা দরকার। কারণ আলসারের চিকিৎসা না করালে সেখান থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

দেখা গিয়েছে সারা বিশ্বে প্রতিবছর যত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন তাঁদের ১ থেকে ২ শতাংশের গ্যাসট্রিক ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ভারতে প্রতিবছর নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ২.৫ শতাংশ আক্রান্ত হন গ্যাসট্রিক ক্যানসারে। তবে আলসার থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে ২ শতাংশ ক্ষেত্রে।

আলসার থেকে সাধারণত দু’ধরনের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গ্যাসট্রিক মলটোমা এবং অ্যাডিনো কার্সিনোমা।

মলটোমা হয় এইচ পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে।

মলটোমা: দেখা গিয়েছে মানুষ সাধারণত গ্যাসট্রিক ক্যানসারে আক্রান্ত হয় মোটমুটি ৫০ বছরের পর। মুশকিল হল, এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়াজনিত আলসারের রোগীর ৩০-৪০ এর মধ্যে মলটোমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মূলত পাকস্থলীর ভিতরের দেওয়ালের আবরণীর গভীরে থাকা গ্রন্থির মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যায় এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার কারণে। ব্যাকটেরিয়াটির কোষের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেখান থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

মলটোমা হয়েছে কি না তা জানতে পরীক্ষা নিরীক্ষা-

আপার জি আই এন্ডোস্কোপি, ডিপ সিটেড বায়োন্সি, জেনেটিক মিউটেশন টেস্ট করার দরকার পড়ে।

মলটোমার চিকিৎসা-

প্রথম পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে এইচ পাইলোরি নির্মূল করার জন্য ওষুধ খেতে হয়। এর পরের পর্যায়ে রোগ ধরা পড়লে কেমোথেরাপি রেডিও থেরাপির আশ্রয় নিতে হয়।

অ্যাডিনো কার্সিনোমা : আলসার থেকে অ্যাডিনোকার্সিনোমা পাকস্থলীর ভিতরের আবরণীতে থাকা গ্রন্থিময় কোযে হয়। আলসার বা প্রদাহের কারণে পাকস্থলীতে গ্রন্থিময় কোষে পলিপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিপগুলি ২ সেন্টিমিটার বা তার চাইতে লম্বা হলে এবং একাধিক পলিপ থাকলে পাকস্থলীতে আডিনোকার্সিনোমা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রোগ পরীক্ষা-

চিকিৎসক ক্যানসার হয়েছে এমন সন্দেহ করলে রোগীকে এন্ডোস্কোপি করাতে দিতে পারেন। এছাড়া বায়োন্সি করাতে দিতে পারেন। রিপোর্টে ক্যানসার হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে রোগীর চেস্ট এবং পেটের সিটি স্ক্যান করাতে হয়। কারণ ক্যানসার কতটা ছড়িয়েছে তা বোঝার দরকার পড়ে।

চিকিৎসা-

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার ধরা পড়লে, অপারেশন করে ক্যানসার কোষগুলিকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

এরপর দরকার হলে রোগীকে কেমো এবং রেডিওথেরাপি করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। স্টেজ ওয়ানে রোগ ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা হলে অ্যাডিনো কার্সিনোমা সাধারণত সেরে যায়।

আলসার থেকে গ্যাসট্রিক মলটোমা অথবা অ্যাডিনো কার্সিনোমা হয়েছে তা বোঝার লক্ষণ-

• অ্যান্টাসিড খেয়েও আলসারের উপসর্গ কমার কোনও লক্ষণ দেখা যায় না ওজন কমতে শুরু করে খাবার পরেই বমি হয় এবং বমির সঙ্গে রক্ত বেরয়। একে বলে হেমাটোমেসিস।

আলসার থেকে ক্যানসার প্রতিরোধ-

• টানা পেট খালি রাখা চলবে না। তিন থেকে চারঘন্টা অন্তর খাবার খেতে হবে অ্যালকোহল গ্রহণের অভ্যেস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ধীরে ধীরে তা ত্যাগ করুন ধূমপানের অভ্যেস আলসার হওয়া মাত্রই ত্যাগ করতে হবে খাবারে নুন কম খেতে হবে খুব গরম জিনিস হুট করে খেলে হবে না • ঠান্ডা খাবার খেতে হবে মিষ্টি জলের ছোট মাছ খাওয়া ভালো মনে রাখবেন, যাদের আলসার আছে তাঁদের প্রতিবছর এন্ডোস্কোপি করতে হবে ভিটামিন সি এবং এ সমৃদ্ধ খাদ্য পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধ করে।