কেন এবং কখন হয় পুষ্টির অভাব?

কেন হয় পুষ্টির অভাব? কম খাওয়াদাওয়া, খাবারদাবার হয়তো পরিমাণে ঠিকই আছে, কিন্তু পরিপাক ক্রিয়ার গণ্ডগোল থাকায় তা শরীরের ভিতর প্রবেশে বাধা পেল; অথবা, সবকিছু ঠিকঠাক চলল যেমন, খাবার পরিমাণ সঠিক, পরিপাক ক্রিয়াও ঠিক মতন, অথচ শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে সে খাদ্যের বিপাকে বিঘ্ন হল।

পুষ্টি এভাবেই বাধা পায়। এবং তা বাধা পেলে যে উপসর্গগুলি আমরা ত্বকে দেখি, তালিকাটিতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেই দেখতে পারবেন। তবু কয়েকটি দরকারি কথা আমাদের জেনে রাখা উচিত।

ভিটামিন ‘এ’

এই ভিটামিনটি দরকার আমাদের শরীরের সঠিক বাড়বাড়ন্তের জন্য। তার মধ্যে অবশ্যই চোখ এবং ত্বক একটি বড় জায়গা দখল করে রয়েছে। আমাদের দেশে ‘এ’ ভিটামিনের অভাব হয় প্রধানত কম পরিমাণে খাবারের দরুন। লজ্জার ব্যাপার হলেও, সত্যি। অন্যান্য দেশে এর অভাব হয় ফ্যাট ম্যালঅ্যাবজরপ্শন এবং লিভারের রোগের দরুন।

‘এ’ ভিটামিনের অভাব পূরণে দরকার হয় ভিটামিন ‘এ’ এক লাখ থেকে তিন লাখ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট। এই ডোজে প্রতিদিন চালিয়ে যেতে হবে। চোখের উপসর্গ ঠিক হতে লাগে কয়েকদিন। কর্নিয়ায় একবার ঘা হয়ে গেলে তা কিন্তু আর সারে না। ত্বকের উপসর্গ যেতে লাগে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস।

ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স

শরীরের জন্য বেশ গুরুত্বের এই ‘বি’ কমপ্লেক্স, ‘বি’ কমপ্লেক্স গঠিত এদের নিয়ে-

১) ভিটামিন ‘বি ১’ বা থায়ামিন

২) ভিটামিন ‘বি ২’ বা রাইবোফ্লেভিন ) ভিটামিন ‘বি ৩’ বা নিয়াসিন

৩ ৪) ভিটামিন ‘বি ৬’ বা পাইরিডক্সিন

৫) ভিটামিন ‘বি ১২’ বা সায়ানোকোবালঅ্যামিন

৬) ফোলিক অ্যাসিড

৭) প্যানটোথেনিক অ্যাসিড

৮) ভিটামিন ‘এইচ’ বা বায়োটিন একটা জিনিস জানা আমাদের উচিত।

আলাদা আলাদাভাবে এই ভিটামিনগুলির অভাব সাধারণত হয় না। যা অভাব হয় তা কয়েকটা ভিটামিন মিলেমিশে।

ভিটামিন ‘সি’

এর অভাবজনিত উপসর্গ ত্বকে দেখা দিতে কেটে যায় ১ থেকে ৩ মাস। তবে খুব বেশিদিন ধরে যদি ‘সি’ ভিটামিনের তাভাব হয় তবে ত্বকের উপসর্গ ছাড়াও রক্তচাপ ভয়াবহভাবে কমে যেতে পারে।

ভিটামিন ‘সি’ খেতে হয় রোজ ১০০ থেকে ৩০০ মি.গ্রা.। চব্বিশ ঘণ্টা পর থেকেই উপসর্গ কমতে শুরু করে। ত্বকের উপসর্গ কমতে লাগে ১০-১২ দিন।

ভিটামিন ‘ডি’

বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ত্বকে ‘ডি’ ভিটামিন অন্তত তিন ভাগের দু’ভাগ কম তৈরি হয়। ফলে যুবকদের তুলনায় ‘ডি’ ভিটামিনের অভাব বয়স্কদের দেখা যায় বেশি। আর যাঁরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন রোজ তাঁদের ক্ষেত্রেও এই ভিটামিনের অভাব দেখা যায়। তাঁদের ক্ষেত্রে রোজ ২০০ থেকে ৪০০ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ভিটামিন ‘ডি’ খাওয়া উচিত।

ভিটামিন ‘ই’

সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রায় মুড়ি- মুড়কির মতন এবং সবচেয়ে বিতর্কিত ভিটামিন এই ভিটামিন ‘ই’। এই ভিটামিন পাওয়া যায় ভেজিটেবল, সিডস্ এবং বাদাম তেলে। ভিটামিন ‘ই’-র সবচেয়ে শক্তিক্তশালী জিনিসটি হল আলফা-টোকোফেরল। সত্যিই কি ভিটামিন ‘ই’ মানুষের জন্য খুব দরকারি, না হলেই নয়? ভীষণ, ভীষণ বিতর্কের বিষয়। সারা বিশ্ব জুড়ে দাবি করা হয় কিছু ত্বক রোগ এবং অন্যান্য কিছু শারীরিক উপসর্গের জন্য ‘ই’ ভিটামিন দরকার। সত্যি বলতে কী, শরীরের বা ত্বকের কোনও উপকার এখনও পর্যন্ত জোর করে বুক ঠুকে কেউ প্রমাণ করতে পারেননি।

জিঙ্কের অভাবে যে কোনও ক্ষত সারতে দেরি হয়। কখনও কখনও জিঙ্কের অভাবের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল জেনেটিক। তখন রোগটির নাম অ্যাক্রোডার্মাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা। এতে উপসর্গটি শুরু হয় মায়ের বুকের দুধ ছাড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। যদি তখন চিকিৎসা না করা যায় মৃত্যু পর্যন্ত  হতে পারে। চিকিৎসাটি কিন্তু খুব সহজ। জিঙ্কের প্রিপারেশন দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে হাত-পা এবং মুখের চারপাশের ফোস্কা সেরে যেতে থাকে বেশ তাড়াতাড়ি।

তালিকাটি দেখলেই একটা কথা পরিষ্কার হয়ে যাবে। পুষ্টি ঠিক থাকলেই ত্বক ভালো থাকে। আর ভালো থাকে মন। কখনও কোনও রোগ হলে তার চিকিৎসাটি করে নেওয়া দরকার। ওপর থেকে তাকে ঢেকে রেখে লাভ নেই। বরং সঠিক পুষ্টির জোগানে, ত্বকের চাকচিক্যটি আসে। বাইরের থেকে মাখা প্রসাধনী সাময়িক, চটজলদি ব্যবস্থা মাত্রা হয়তো কখনও আমাদের তা সত্যিই দরকার। তাই বলে সেটাই সব নয়, প্রধানও নয়। লোক- দেখানো জিনিসের একটা আলগা সৌন্দর্য হয়তো সত্যিই হয়, কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী। স্থায়ী সৌন্দর্য পেতে পুষ্টিই সেরা প্রসাধন। ত্বকের পুষ্টি প্রসঙ্গে আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো যে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্যে রুটি বা ভাতের কোনও ভূমিকা নেই। ত্বক ভালো রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ভিটামিন বা মিনারেল। কার্বোহাইড্রেটের তেমন কোনও সক্রিয় প্রভাব নেই। তবে শ্বেতসারের অভাবে সাধারণ স্বাস্থ্য খারাপ হলে তার প্রভাব ত্বকেরও পড়ে।