পুষ্টির অভাবে কি কি উপসর্গ দেখা দিতে পারে ?

পুষ্টির অভাবে ত্বকে উপসর্গ/ চিকিৎসা

ভিটামিন ‘এ’: শুষ্ক ত্বক। আমাদের দেশে প্রধানত কম পরিমাণে খাবারের জন্য এবং অন্যান্য দেশে ফ্যাট ম্যালঅবজার্পশন ও

লিভারের রোগের কারণে ভিটামিন ‘এ’-র ঘাটতি হয়। ভিটামিন বি: ভিটামিন ‘বি ১’, ‘বি

২’, ‘বি ৩’, ‘বি ৬’, কমপ্লেক্স ‘বি ১২’, এইচ, ফোলিক অ্যাসিড, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড নিয়ে গঠিত। আলাদা আলাদাভাবে এই ভিটামিনগুলির অভাব সাধারণত হয় না। যা অভাব হয় তা কয়েকটা ভিটামিন মিলেমিশে।

ভিটামিন বি-২ (রায়বোফ্লেভিন): মুখের দুই পাশে প্রদাহ, জিভে প্রদাহ ও লাল ভাব, ঠোঁট জ্বালা, সেবোরিয়ার মতো ডার্মাটাইটিস।

ভিটামিন বি-৩ (নিয়াসিন): শরীরের খোলা জায়গায় কালো কালো দাগ, ঠোঁট জ্বালা, মুখের দুই কোণে প্রদাহ, মুখের ভিতর জ্বালা।

ভিটামিন বি-৬ (পাইরিডক্সিন): জিভ, ঠোঁটের প্রদাহ, মুখের ভিতর ঘা, ঠোঁটের দুই কোণে জ্বালা, সেবোরিয়ার মতো

ডার্মাটাইটিস বা ত্বক প্রদাহ।

ভিটামিন বি-১২ (সায়ানোকোবালঅ্যামিন): সারা দেহে প্রধানত, শরীরের খাঁজগুলিতে কালো আবছা দাগ, কালো দাগের ছায়া পড়ে হাতের ক্রিজে, হতে পারে ছোট ছোট বৃত্তাকার কালো দাগ-মূলত হাতের তালু, পায়ের তলায় এবং মুখের ভিতর জিভ আকারে বড়, লাল রং।

ফোলিক অ্যাসিড: দেহের খোলা জায়গার রং হয় বাদামি। ঠোঁট ও জিভে প্রদাহ, মুখের ভেতর ঘা। ফোলিক অ্যাসিড কম হলে ভিটামিন বি-১২-এর অভাবে ত্বকে যে কালো রং হয়-ঠিক তেমনই সমস্যা হয়।

ভিটামিন এইচ: শুভ ত্বক, দেহের খাঁজে প্রদাহ। ঠোঁটের আশপাশে জ্বালা। চুল কমা।

ভিটামিন সি: চুল তৈরি হয় ক্রু-এর মতো। পাকানো পাকানো। চুলের গোড়ায় ত্বক পুরু হয়। চুলের চারপাশ জুড়ে রক্তক্ষরণ। ত্বকে রক্তক্ষরণ। মাড়ি প্রদাহ। কেটে-ছড়ে যাওয়ার পর ত্বক জুড়তে সময় লাগে। ভিটামিন সি’র অভাবজনিত উপসর্গ ত্বকে দেখা দিতে কেটে যায় ১-৩ মাস। কমতে পারে রক্তচাপ। ভিটামিন সি খেতে হয় রোজ ১০০-৩০০ মিলিগ্রাম। ২৪ ঘণ্টা পর থেকেই উপসর্গ কমতে শুরু করে।

ত্বকের উপসর্গ কমতে লাগে ১০-১২ দিন। ভিটামিন ডি: বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ত্বকে ভিটামিন ডি অন্তত দুয়ের তিন ভাগ কম তৈরি হয়। ফলে যুবকদের তুলনায় বয়স্কদের এর অভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়। এর অভাবে ত্বকের কোনও পরিবর্তন হয় না। তবু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভিটামিন ডি তৈরি হওয়া শুরু হয় ত্বকে। সানস্ক্রিন ব্যবহারে এই তৈরি ব্যাহত হয়। অভাবজনিত সমস্যায় নিয়মিত ২০০-৪০০ আন্তর্জাতিক একক ভিটামিন ডি খাওয়া উচিত।

ভিটামিন ই: শাকসবজি, বীজ, বাদাম তেল থেকে মূলত সংগৃহীত এই ভিটামিন ই আদৌ শরীরের কোনও কাজে আসে কি না তা বিতর্কিত। অথচ সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভিটামিন। দাবি করা হয়, কিছু ত্বক রোগ ও অন্যান্য উপসর্গের জন্য ‘ভিটামিন ই’ দরকার তবে তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। চুল পড়া বা কালো ছোপ পড়া দেখলেই যাঁরা এটি খান নিজে থেকেই তাঁরা একটু ভাবুন। ভিটামিন কে: ত্বকে রক্তক্ষরণ।

জিঙ্ক: হাত-পা এবং মুখের চারপাশে ফোস্কার মতো পরিবর্তন। নখকুনি। ঠোঁটের দুই কোণে, জিভে প্রদাহ। চুল পড়ে যাওয়া। অতিরিক্ত ব্লাডসুগারের মতোই জিঙ্কের অভাবে ক্ষত সারতে দেরি হয়। জিঙ্কের পরিমাণ কম আছে এমন দুধ নবজাতককে খাওয়ালে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। ‘প্রি ম্যাচিওর বেবি’র জন্মগত জিঙ্ক ঘাটতি থাকতে পারে। মদ্যপায়ীদের প্রস্রাবের সঙ্গে জিল্ক বেরিয়ে যায়-জিক- ঘাটতি হতে পারে। ম্যালঅবজার্পশন সিনড্রোম এই সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও জিনগত রোগ অ্যাক্রোডার্মাটাইটিস এন্টেরোপেথিকায় বুকের দুধ ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর এই সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসা সহজ। জিঙ্ক প্রিপারেশন দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে শুভ লক্ষণ দেখা যায়।

এসেনসিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড: চুল পড়ে যাওয়া। একজিমা। দেহের খাঁজের ত্বকে ছড়ে গিয়ে সামান্য খাওয়া মতো। ত্বক থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়া।

এনার্জি: ম্যাসারমাস রোগ। বাচ্চাটি প্রায় শুকিয়ে তার ত্বক ও হাড়ই অবশিষ্ট থাকে। মূলত হয় খেতে না পাওয়ার দরুন। শুকনো ও কোঁচকানো ত্বক। চর্বি কমে আসা। চুল পড়া। এক্ষেত্রে রোগীকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির পাশাপাশি জিঙ্ক দিতে হবে।

প্রোটিন: কোয়াশিয়রকর রোগ। লক্ষণ, কার্বোহাইড্রেট আধিক্য, খিদে না পাওয়া, খিটখিটেমি, ঝিম ধরা ভাব, ডায়েরিয়া, ফ্যাটি লিভার, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসা ইত্যাদি।

এছাড়া শুকনো, সাদা ত্বক, হাত-পা ঠান্ডা, হাতে-পায়ে জল জমা। ত্বকের অন্যান্য পরিবর্তন ও চুলের রঙের রকমফের। চিকিৎসা হিসেবে প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টির পাশাপাশি জিঙ্কের ব্যবহার। এই রোগে হাতে-পায়ে ক্ষত হতে পারে। তা থেকে মুক্তি পেতেই জিঙ্ক দেওয়া হয়।

মনে রাখতে হবে, চটজলদি সাময়িক ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য প্রসাধনী ব্যবহার করা যেতে পারে ঠিকই, কিন্তু চিরস্থায়ী সৌন্দর্যের জন্য পুষ্টির কোনও বিকল্প প্রসাধনী নেই।

মুখে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে ভেষজ, বিভিন্ন শাকসবজি, ফল লাগানোর রেওয়াজ দিন দিন বাড়ছে। বলবার কথা হল, এতে সাময়িক কিছু উপকার পাওয়া গেলেও ত্বকের স্থায়ী সমাধানে এগুলি অটল। কেননা, বহিত্বক ভেদ করে এ সমস্ত ভেষজ নির্যাস অন্তত্বকে ঢুকতে পারে না। এর ফলে ত্বকে দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টি জোগানোর ক্ষমতা এর নেই। মুখে লেবু মাখার ক্ষেত্রে সাবধান। কেননা, লেবুতে এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ আছে যা মুখে স্থায়ী কালো দাগের সৃষ্টি করতে পারে।