আপনার হাড়ের সমস্যা? অস্টিওপরোসিস নয়তো ? অস্টিওপরোসিসের কিছু লক্ষণ রয়েছে যার দ্বারা সহজেই বোঝা যায় অস্টিওপরোসিস হয়েছে কিনা। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য, স্ক্যান এবং এক্স-রে সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এই লক্ষণগুলি অস্টিওপরোসিসকে প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করতে এবং খারাপ অবস্থার হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
অস্টিওপরোসিস কি?
অস্টিওপোরোসিস একটি অস্থি সংক্রান্ত রোগ যা প্রায়ই বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এটি পা, নিতম্ব, পিঠ, গোড়ালি বা চোয়ালকে প্রভাবিত করে। বর্তমান দিনে অস্টিওপোরোসিস শুধুমাত্র বেশি বয়সী মহিলাদেরই স্বাস্থ্য সমস্যা নয় বরং এই সমস্যা এখন ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই দেখা যায়। আমাদের হাড় ৩০ বছর বয়সের পরে ক্ষয় হতে শুরু করে। কিন্তু আমরা হাড়ের স্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করি এই ভেবে যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নয় আর শুরুতে এর ততটা ব্যথা যন্ত্রনা থাকে না।
![](https://thehealthytalk.com/wp-content/uploads/2023/12/osteoporosis-graphic.jpg)
ভঙ্গুর নখ
নখ কি সামান্য চাপেই সবসময় ভেঙ্গে যায়? তাহলে বুঝবেন আপনার হাড়ও ভঙ্গুর। ত্বকের মতো, আপনার নখ এবং হাড়ে কোলাজেন প্রোটিন রয়েছে যা তাদের শক্তিশালী করে। যদি আপনার নখ ভাঙতে থাকে তবে এটি অপর্যাপ্ত কোলাজেনের অভাবের কারণে হতে পারে। আর দুর্বল নখ মানে দুর্বল হাড়ও।শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবের জন্য হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়।
তাই কী করবেন: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান, যেমন দুধ (ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ), দই, ব্রোকলি, ঢেঁড়শ (ভিন্ডি), বাঁধাকপি, বাদাম, সয়া এবং কাঁটাযুক্ত মাছ ইত্যাদি । আপনি ক্যালসিয়ামের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন ডি (সানশাইন ভিটামিন), পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এবং ভিটামিন কেও নিতে ভুলবেন না।
দুর্বল গ্রিপ
জিনিস আঁকড়ে ধরতে অসুবিধা হচ্ছে? আপনার যদি আঁকড়ে ধরা বা বসে থাকা থেকে উঠে দাঁড়ানোতে সমস্যা হয়,তবে বুঝবেন আপনার হাড় দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অনেক মধ্যবয়সী মহিলা এই দুর্বল হাড় ও পেশী সমস্যার মুখোমুখি হন। যা আপনাকে সংকেত দেয় যে আপনি হাড়ের সমস্যার সম্মুখিন হতে চলেছেন। গবেষকদের মতে হ্যান্ডগ্রিপ কমে যাওয়া এবং বাহু, মেরুদণ্ড ও নিতম্বের হাড়ের ঘনত্বের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে।
কি করবেন :
যোগ বা মার্শাল আর্ট, তাই চি ভারসাম্য ইত্যাদি নমনীয়তা এবং শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন প্রোটিন আপনার পেশী এবং অস্থিকে মজবুত করে গড়ে তুলবে। এরজন্য আপনি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের কাছে ও প্রশিক্ষন নিতে পারেন । যা আপনাকে শক্তিশালী হতে, টোন করতে এবং পেশী তৈরি করতে কাজে লাগবে । এতে পড়ে গিয়ে আপনার হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
পিছিয়ে যাওয়া মাড়ি :
আপনার কি দাঁতের ক্ষয় আছে? দুর্বল হাড়ও আপনার চোয়ালের হাড়ের ভর হারাবে, তাই আপনার মাড়ি আপনার দাঁত থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করবে। মহিলারা কখনও কখনও তাদের দাঁতের সমস্যায় এলে দেখা যায় অস্টিওপরোসিসের লক্ষণ। প্রকৃতপক্ষে, গবেষণায় দেখা যায় যে অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত নারীদের দাঁত হারানোর সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় তিনগুণ বেশি।
কী করবেন:
দাঁতের এক্স-রে করে দুর্বল হাড় শনাক্ত করা যায় । যা একজন ডেনটিস্ট বুঝতে পারবেন। অস্টিওপোরোসিস প্রায়ই বংশগত ভাবে লক্ষ করা যায়। আপনি যদি একজন মহিলা হন এবং আপনার মা বা দিদিমার গুরুতর অস্টিওপোরোসিস ছিল, তাহলে আপনারও হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করুন। কারণ ভিটামিনের ঘাটতি এই রোগকে আরও খারাপ করে তোলে। স্টেরয়েডের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও এই অবস্থাকে ত্বরান্বিত করে।
দ্রুত গড় হার্টবিট
আপনার হৃদস্পন্দন আপনার ফিটনেস স্তরের একটি ইঙ্গিত দেয়। গড় ব্যক্তির একটি হৃদস্পন্দন আছে যা প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বিট। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি মিনিটে ৮০ বীট বা তার বেশি থাকলে নিতম্ব, থাই(pelvis)এবং মেরুদণ্ডের ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি আধুনিক জীবনধারা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে ঘটে। ব্যায়াম, বিশেষ করে ওজন প্রশিক্ষণ যেমন হাঁটা একটি শক্তিশালী হৃদয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কী করবেন:
সকালে ঘুম থেকে উঠলে প্রতি মিনিটে আপনার বিশ্রামরত হৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করা শুরু করুন। ১৫ সেকেন্ডের জন্য আপনার কব্জিতে দুটি আঙুল চেপে আপনার নাড়ি গণনা করুন এবং সংখ্যাটিকে চার দ্বারা গুণ করুন। নিয়মিত ওয়ার্কআউট শেষ পর্যন্ত ধীর বিশ্রামের হার্ট বিটকে নেতৃত্ব দেবে। কার্ডিও, যেমন বাইক চালানো এবং সাঁতার কাটাও বিশ্রামের হৃদস্পন্দন কমানোর জন্য দুর্দান্ত। কিন্তু আপনার হাড়কে মজবুত করতে আপনি হাঁটা, দৌড়ানো বা জুম্বার মতো ওজন বহনকারী কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হোন।
পেশী বা হাড় ব্যথা:
বয়স্ক হওয়া মানে আরও ব্যথা এবং যন্ত্রণার সাথে যুক্ত থাকা, তবে আপনার ভিটামিন ডি বা খনিজ ঘাটতিও হতে পারে, যা ক্র্যাম্প এবং পিঠের নিচের ব্যথা এড়াতে প্রয়োজন হয়। রাতে পায়ে ব্যথা একটি সাধারণ সতর্কতা সংকেত দেয় যে আপনার শরীরে আরও ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম প্রয়োজন।অন্যথায়, আপনি অত্যধিক হাড় ক্ষয় এবং অকাল অস্টিওপরোসিস সম্মুখীন হতে পারেন।হাড়ের অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হল ভিটামিন কে, ফসফরাস, বোরন এবং স্ট্রন্টিয়াম।
কী করবেন:
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খান, হাড়সহ মাছ, লেটুস বা পালং শাক খান এবং সকালে হাঁটতে যান। আপনার বয়সের জন্য সঠিক দৈনিক মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করার কথা ভুলবেন না।
কমেছে উচ্চতা:
আপনার পিতা-মাতা বা দাদু দিদিমা থাকতে পারে যারা এখন অল্পবয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় কিছুটা খাটো। এটি ধীরে ধীরে ঘটে এবং পিঠটি সোজা নাও হতে পারে। মেরুদণ্ডের চারপাশের পেশী দুর্বল হওয়ার কারণে অনেক বয়স্ক লোকের দাঁড়ানোর ভঙ্গি খারাপ হয়। এটি হাড়ের ক্ষতির কারণে হয়।
কি করতে হবে:
আপনি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণ করুন, আর আঘাত লাগার হাত থেকে নিজেকে এড়ান।
![](https://thehealthytalk.com/wp-content/uploads/2023/12/VC9Ppmo8tbaeYuAl40jv-1.jpg)
দুর্বল ফিটনেস স্তর:
আপনি যদি শারীরিকভাবে সক্রিয় না হন তবে আপনার হাড় এবং পেশীগুলি অবশেষে দুর্বল হয়ে পড়বে। তাই আপনার রুটিনে কিছুটা ফিটনেসের সময় রাখা উচিত।
কী করবেন:
৩০-৬০ মিনিটের মর্নিং ওয়াক করলে পেশী ও হাড় মজবুত হবে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমবে।
দুর্বল হাড় শুধু একটি “সিনিয়র” বা বয়স্ক জিনিস নয়।বেশিরভাগ লোক অস্টিওপরোসিসকে একটি “বয়স্ক” সমস্যা হিসাবে মনে করে। মনে করে ৬৫ বছর বয়সের আগে হাড়ের সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু সত্য হল অকাল হাড়ের ক্ষয় রোধ করার ভিত্তিটি আগেই তৈরি করতে হয়। ৪০ বছর বয়সের পরে আপনার বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাকে উপেক্ষা করবেন না। প্রাথমিক সনাক্তকরণই হল এই প্রগতিশীল রোগ প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ভিটামিন এবং খনিজ গ্রহণ করা নিশ্চিত করুন এবং একটি সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
এই অস্টিওপরোসিস লক্ষণগুলির বেশিরভাগই সাধারণ জীবনধারা পরিবর্তনের দ্বারা প্রতিরোধ করা যেতে পারে: সঠিক মাত্রায় খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সম্পূরক গ্রহণ করুন। যে কোনও স্বাস্থ্যের অবস্থার মতো, প্রাথমিক সনাক্তকরণই সর্বোত্তম প্রতিরোধ। যদি আপনার মা বা ঠাকুরমা অস্টিওপরোসিসে ভুগে থাকেন তবে প্রাথমিক সতর্কতা লক্ষণগুলির জন্য সতর্ক থাকুন, যাতে আপনি হাড়ের ফাটল এড়াতে পারেন।