• গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিকাল সমস্যায় সাধারণত কী কী পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে?
• এই ধরনের সমস্যায় একেবারে প্রথমেই পর পর তিন দিন স্টুলের রুটিন অকাল্ট ব্লাড টেস্ট করা হয়। গ্যাস্ট্রোইন্টেসটানাল ট্র্যাক্ট থেকে শুরু করে খাদ্যনালী, এমনকী রেকটাম পর্যন্ত কোনও সমস্যা হলে চিকিৎসকেরা এই টেস্টটি করার পরামর্শ দেন। এছাড়া বাকি যেসব গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিকাল টেস্ট আছে সেগুলি সবই ‘অরগ্যান’ ভিত্তিক। যেমন- ইসোফেগাসে কোনও সমস্যা আছে কিনা জানতে সাধারণত আপার জি আই এন্ডোস্কোপি করা হয়।
আবার পাকস্থলীতে কোনও রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা জানতে মূলত বেরিয়াম মিল, প্রয়োজনে এন্ডোস্কোপি এবং বেরিয়াম মিল ফলো-ফ্র টেস্টের সাহায্য নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, বেরিয়াম মিল ফলো-গ্রু টেস্টটি ক্ষুদ্রান্ত্রের কোনও সমস্যা জানতেও করা হয়ে থাকে। যদিও আজকাল এই টেস্টটির সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে ডবল বেলুন এন্টেরোস্কোপির মতো অত্যাধুনিক পরীক্ষা করে থাকেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টরা। এই পরীক্ষাটি, ক্ষুদ্রান্ত্রের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সমস্যা ধরতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এর পরে আসে কোলন। শরীরের এই অংশটি দেখার জন্য বেরিয়াম এনেমা নামে একটি টেস্ট করা হয়। সঙ্গে প্রয়োজন মতো আপার জি আই এন্ডোস্কোপি এবং কোলনোস্কোপি করা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাগুলি যে শুধুমাত্র কোলনের সমস্যা ধরতেই সাহায্য করে, এমন নয় কিন্তু। বৃহদন্ত্র থেকে সিকাম পর্যন্ত অংশে কোনও জটিলতা আছে কিনা ধরতেও এই পরীক্ষাগুলি সাহায্য করে।
প্যাংক্রিয়াসের সমস্যায় প্রথমে অ্যামাইলেজ এবং লাইপেজ নামক রক্ত পরীক্ষা করা হয়। পরে প্রয়োজন মতো সিইসি টি স্ক্যান করা হয়ে থাকে।
লিভারের নানাবিধ রোগ নির্ণয়ে এখনও পর্যন্ত সব থেকে কার্যকরী টেস্টটি হল আলট্রাসাউন্ড। তবে কিছু ক্ষেত্রে লিভার ফাংশন টেস্ট, সি টি স্ক্যান, এন্ডোস্কোপিক আলট্রাসাউন্ড এবং এম আর সি পি-এর মতো পরীক্ষা করাও হয়ে থাকে। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর লিভার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে কিনা দেখতে আজকাল ফাইব্রো স্ক্যান নামক একটি অত্যাধুনিক পরীক্ষা করা হয়। এই টেস্টটি লিভারের অনেক জটিল রোগ নির্ণয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কোন রোগে কী টেস্ট?
প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়েছে কিনা জানতে সাধারণত রক্ত এবং সি ই সি টি টেষ্ট করা হয়। আবার জন্ডিস এবং সেই সম্পর্কিত শারীরিক ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান জানতে প্রথমে আলট্রাসাউন্ড, পরে প্রয়োজন মতো এম আর সি পি টেস্ট করা হয়ে থাকে।
সিরোসিস অব লিভারের সমস্যায় প্রথমে আলট্রাসাউন্ডের উপরই ভরসা রাখেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর লিভার কতটা সুস্থ হয়ে উঠল, তা জানতে ফাইব্রো স্ক্যান করা হয়। ইন্টেস্টিনাল ব্লিডিং হলে প্রথমে আপার জি আই এন্ডোস্কোপি করা হয়। আর যদি পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়ে তাহলে কোলনোস্কোপি করার প্রয়োজন পড়ে। এই দুটি টেস্টে যদি কোনও গোলমাল ধরা না পরে, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা এন্টেরোস্কোপি করার পরামর্শ দেন।
স্পিন বা প্লীহার সমস্যায় প্রথমে আলট্রাসাউন্ড, পরে প্রয়োজন মতো সি টি স্ক্যান করা হয়ে থাকে।
ইসোফেগাসের সমস্যা জানতেও চিকিৎসকেরা প্রথমে এন্ডোস্কোপির ওপরই ভরসা রাখেন। পরবর্তী সময় ক্যানসারে উপস্থিতি জানতে কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপিক আলট্রাসাউন্ড করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
টেস্টগুলি কী পদ্ধতিতে করা হয়?
সমস্ত ধরনের গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিকাল টেস্টকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। ইনভেসিভ এবং নন-ইনভেসিভ। ইনভেসিভ টেস্টগুলি, যেমন-এন্ডোস্কোপি, ন্যারো ব্যান্ড ইমেজিৎ, কোলনোস্কোপি, এন্ডো-সিস্টো স্কোপি এবং এন্ডোস্কোপিক আলট্রাসাউন্ড করার সময় মুখ বা মলদ্বার দিয়ে এন্ডোস্কোপ ঢোকান হয়। তার পর সমস্যা যেখানে সেখানে ক্যামেরা নিয়ে গিয়ে কী ধরনের সমস্যা হয়েছে তা ভালো করে দেখে নেন চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে আলট্রাসাউন্ড, সি টি স্ক্যান, এম আর সি পি, ফাইব্রো স্ক্যান এর মতো নন-ইনভেসিভ টেস্টগুলি মূলত ইমেজিং টেস্ট। এগুলি করার সময় কোনও যন্ত্র শরীরের মধ্যে ঢোকান হয় না। পরিবর্তে শরীরের যে অংশে সমস্যা, সেখানকার ছবি তুলে চিকিৎসকেরা রোগের প্রকৃতি নির্ণয় করে থাকেন।
টেস্টগুলির কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
একেবারে যে নেই এমন নয়। তবে তা খুবই বিরল ঘটনা। যেমন, সি ই সি টি করার সময় যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, তার জন্য কারও অ্যালার্জি হতে পারে। তবে সবারই যে এমন হবে, তা নয় কিন্তু। সর্বোপরি এই টেস্টগুলির কার্যকারিতা এত বেশি যে আজকাল কেউই আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করেন না।
টেস্টের আগে ও পরে সাবধানতা কী?
প্রত্যেকটি টেস্টের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। সেই সব নিয়মগুলি পরীক্ষার আগে চিকিৎসকের থেকে ভালো করে জেনে নেবেন। নচেৎ টেস্টের রেজাল্ট ভালো তো হবেই না, উলটে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। যেমন, চিকিৎসকেরা বলে দেওয়া সত্ত্বেও অনেকেই আলট্রাসাউন্ড করার আগে পেট ভরে খেয়ে নেন। এতে শ্বাসনালীতে খাবার আটকে বড় রকমের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আবার অনেকে টেস্ট করাতে এসে এত তাড়াহুড়ো করেন যে চিকিৎসকের পক্ষেও ঠিক মতো নিয়ম মেনে পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। এই ধরনের অভ্যাসগুলি ত্যাগ করতে হবে। কারণ ভুলে গেলে চলবে না প্রায় সবকটি গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিকাল টেস্টই বেশ ব্যয়বহুল। তাই ঠিক মতো পরীক্ষার রিপোর্ট না পেলে বারে বারে এই সব টেস্টগুলি করতে হতে পারে। এতে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তা বহন করার ক্ষমতা আছে কিনা, তা একবার ভেবে নেবেন।
টেস্ট নিয়ে অনেক ভুল ধারণা আছে। ভুল ধারণা কাটাতে আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
ভুল ধারণা কাটাতে চিকিৎসক-রোগী, উভয়েরই যৌথ ভূমিকা আছে। তবে টেস্ট করানোর আগে কতগুলি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।
যেমন- সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে টেস্টগুলি করাবেন। টেস্ট করাতে গিয়ে একবারেই তাড়াহুড়ো করবেন না যে সব জায়গায় এইসব টেস্টগুলি নিয়মিত হয় না, সেখানে এইসব অত্যাধুনিক পরীক্ষাগুলি না করানোই ভালো টেস্ট করানোর আগে কী ধরনের সমস্যার জন্য আপনি টেস্টগুলি করাতে যাচ্ছেন তা ভালো করে চিকিৎসকের থেকে জেনে নেবেন টেস্ট করাতে যাওয়ার সময় সব সময় সঙ্গে প্রেসক্রিপশন রাখবেন।