লোককথা প্রচলিত-‘লিভার যদি হয় গেঁতো, খাও তবে বেতো’। শাকটি ক্ষারযুক্ত, স্বাদে মধুর, হজমকারক, অরুচি নাশক, কোষ্ঠ-পরিষ্কারক, যকৃৎ ও গ্লিহার ক্রিয়াবর্ধক, বলকারক, অর্শে ও রক্তার্শে খুবই উপকারী। বায়ু-পিত্ত-কফের সমতা রক্ষা করে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। ক্রিমি, রক্তপিত্ত, অম্লপিত্ত, অতিসার, গাত্রপ্রদাহ, আমবাত, মূত্রক্ষিতা, আমাশা, কাশি প্রভৃতি রোগ নিয়ন্ত্রণে বেতোর ক্ষমতা অসীম। এছাড়া মেধা, শক্তি ও শুক্রবল বৃদ্ধি করতে পারে।
সাধারণত এটি যব-গম-সরযে ও আলু চাষের জমিতে আগাছা হিসেবে উৎপন্ন হয়। কোনও কোনও জায়গায় বেতোর উৎপাতে অন্য শাকসবজির চাষ ব্যাহত হয়ে থাকে। তা সত্ত্বেও বাংলার বিশাল অংশের লোকেদের কাছে বেতো আজও অপরিচিত।
ঋগ্বেদ ও অথর্ববেদের বৈদ্যককল্পে যবশাক বা বাস্তুক শাকের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে-তুমি বাস্তুক অর্থে বেতো শাক, তুমি দেহের শক্রবর্গকে পরাজিত করতে পার। অর্শ, কোষ্ঠবদ্ধতা ও কৃমিগত শত্রুসমূহে ধ্বংস করতে পারবে।
যবের খেতে জন্মায় বলে, এর আর এক নাম যবশাক। আর বাস্তুর আশপাশের জমিতে জন্মে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে, সেজন্য বাস্তুক শাক, তা থেকে হয়ে গেল-বাথুয়া, বন্ধুয়া, বেতো শাক। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এটির চাষের পরিমাণ বেড়েছে।
বেতোকে গুণের বিচারে শাকরাজ বা শাকশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রিয় শাক বেতো। প্রায় সব শাককে হালকা ভাপিয়ে জল ফেলে রান্না করতে হয়, কিন্তু বেতো শাকের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
শাস্ত্রে বলা হয়েছে-বেতো শাক ঘোল ও অল্প লবণ সহযোগে রান্না করে খাওয়ার পরপরই মুখশুদ্ধি হিসেবে হরীতকী খেলে কখনও কোনও ব্যাধি শরীর আসতে পারবে না। এদিকে দেখতে পাই-বিহার, উত্তরপ্রদেশের মানুষেরা এই ধরনের একটা তরকারি রান্না করে খেয়ে থাকেন। যেমন-বেতো শাকের সঙ্গে পরিমাণমতো দই বা ঘোল ও লবণ দিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকেন। এর নাম হল ‘বথুয়া কা রায়তা’। বাংলার কোথাও কোথাও শিবচতুর্দশীর পরের দিন বেতোশাক ও শুকনো কুল রান্না করে খাওয়ার ধর্মীয় সংস্কার আছে।
এই শাকটিতে এমন এক প্রকার উদ্বায়ী তেল আছে, যেটি অস্ত্রকে পরিষ্কার রাখে অর্থাৎ সহজে হজম হয় এবং কোষ্ঠকে পরিষ্কার করে। মৃত গ্রন্থির ক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখে এবং লিভারের ক্রিয়াকে শক্তিশালী করে তোলে। শাকটিতে ভিটামিন-সি, এ, অ্যাসকারিডল, ম্যাগনেশিয়াম বিদ্যমান। লাল ও সাদা হিসাবে দুই প্রকারের বেতোশাক পাওয়া যায়। আলু- বেগুন- সিম-কুমড়ো-বড়ি-গাজর প্রভৃতি সহযোগে রান্না করে খেতে পারেন। একটা মুষ্টিযোগের উল্লেখ করা যাক –
বেতো শাকের রস এক কাপের সঙ্গে তিল তেল ২ কাপ ও জল ৩ কাপ মিশিয়ে হালকা আঁচে ফোটাতে হবে। তেল অবশিষ্ট থাকতে নামিয়ে, ঠান্ডা হলে ছেঁকে শিশিতে ভরুন। এটি মাথায় মাখলে উকুন মরবে, খুশকি ও মাথার চামড়ার ঘা সারবে।