কয়েকটি সাধারণ সমস্যায় কীভাবে আয়ুর্বেদের ঘরোয়া চিকিৎসা করা যেতে পারে, সেটাই আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়।
• আঘাত থেকে ব্যথা হলে: ঘৃতকুমারীর ডাঁটা কাটলে যে লালা বেরয়, তা লাগালে সদ্য আঘাত লেগে ব্যথা ও ফোলা হলে কমে যাবে। বার বার ২/১ দিন লাগালে কাজ হবে। ব্যথা দীর্ঘদিনের হলে ২/৩টি জায়ফলের গুঁড়ো ১০০ গ্রাম সরযে তেলে মিশিয়ে রাখুন। সেটি কয়েকদিন মালিশ করলে চলে যাবে। এতে সামান্য কপূর (২/৩ গ্রাম) মিশিয়ে নিতে পারেন।
• পা-কামড়ানো: উপরিউক্ত জায়ফল ও কপূর মিশ্রিত তেলটি মালিশ করলে কমে যাবে। দিনে ২/৩ বার লাগাতে হবে।
• স্টিফনেক ও ফিক ব্যথায়: স্টিফনেকে ঘাড় এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়া উপরিউক্ত জায়ফল ও কপূর মিশ্রিত তেল মালিশ করলে উপকার পাবেন। শুঁঠ চূর্ণ ১ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার গরম জল দিয়ে খাবেন।
• মাথা ঘোরা ও মাথা ব্যথায়: অন্য কোনও রোগের কারণে মাথা ঘোরা না হলে, তা যদি সাধারণ দুর্বলতা, অনিদ্রা প্রভৃতি থেকে আসে, তাহলে অশ্বগন্ধা চূর্ণ ও গোক্ষুর চূর্ণ সমপরিমাণে মিশিয়ে একটা মুখ ঢাকা পাত্রে রাখুন। তা থেকে সকালে ও সন্ধ্যায় ৩ গ্রাম মাত্রায় নিয়ে কাপখানিক হালকা গরম দুধে ফেটিয়ে খেতে হবে। ১০/১৫ দিন খান। মাথা ব্যথা বা যন্ত্রণা হলে পেঁয়াজ রসের নস্যি নেবেন। এছাড়া শ্বেতচন্দন ঘযার সঙ্গে সামান্য কপূর মিশিয়ে কপালের দু’ধারে প্রলেপ দেবেন।
• আঁচিলে: মনসা গাছের মূল পুড়িয়ে সেই ছাই ঘিয়ে মিশিয়ে মলমের মতো করে লাগাতে হবে। খুব বড় হতে থাকলে ক্ষারসূত্রের সাহায্যে কেটে ফেলা ভালো।
• ব্রণ হলে: ব্রণ বলতে নানাপ্রকার ঘা বা ক্ষত সংক্রান্ত রোগকে বোঝায়। এখানে ব্রণ অর্থে বয়োরণ অর্থাৎ কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে মুখে যে ব্রণ বেরয়। নখ দিয়ে খোঁটার জন্য সমস্যা দেখা দেয়। লাল শিমুলের কাঁটা দুধে ঘষে লাগালে কমে যায়। জায়ফল জলে ঘষে চন্দনের মতো করে লাগালেও কাজ হবে। ঘষাঘষি খোঁটাখুটি চলবে না।
• গায়ে দুর্গন্ধ হলে: সাধারণত গরমের দিনে হয়। অনেকের জামা ও প্যান্ট খোলার পর গাঁ ও বগল থেকে একটা ভ্যাপসা গন্ধ বেরয়। কারুর কারুর মোজা থেকে দুর্গন্ধ বেরয়। অনেক সময় মোজা খোলার সময় কাছে থাকা দায়। এক্ষেত্রে অনন্তমূল চূর্ণ ১-২ গ্রাম মাত্রায় দিনে ২ বার খেতে হবে। আর মেহোন্দ পাতা ও তেজপাতা সিদ্ধ জল দিয়ে স্নানের পর গা মুছে নিতে হবে। অনন্তমূল চূর্ণের সঙ্গে ১২ গ্রাম মাত্রায় দারুচিনি মিশিয়ে খেলে চমৎকার কাজ দেবে।
• স্বরভঙ্গ বা গলাবসায়: মারাত্মক কোনও রোগের কারণ হিসেবে আসতে পারে। সতর্ক হতে হবে। তবে ঠান্ডা লেগে কফ-কাশি- সর্দির প্রাদুর্ভাবে গলা বসে গেলে যষ্টিমধু ও লাল বচের টুকরো মুখে রেখে চুষে চুষে খাবেন। গন্ধতৃণ (সেট্রেনিলা) গাছের ২/৩টি পাতা কুচি কুচি করে কেটে ৩ কাপ জলে ফুটিয়ে আন্দাজ ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে তা থেকে এক কাপ নিয়ে সামান্য নুন মিশিয়ে গার্গল করুন। বাকি এক কাপ জলে সামান্য চিনি মিশিয়ে চায়ের মতো খেতে পারেন। গন্ধতৃণ না পেলে কাঁচা তেঁতুল পাতা বা তেজপাতা সিদ্ধ জল এভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এই সঙ্গে তুলসী ও বাসক পাতার রস ২ চা চামচ নিয়ে তাতে চামচখানিক মধু মিশিয়ে দিনে একবার করে খেলে তাড়াতাড়ি উপকার হবে। মেথি চা মাঝে মাঝে খেতে পারেন।
• চুল উঠে যাওয়া, পাক ধরা ও ভেঙে যাওয়া: ৪/৫টি ট্যাড়শপাতা ও ৮/১০টি জবাপাতা (লাল জবা) কুচি কুচি করে কেটে সামান্য জলে চটকাবেন। তারপর পাতাগুলো তুলে নিয়ে নিংড়ে সেগুলি ফেলে দেবেন। এবার ওই লালা মিশ্রিত ফেনা দিয়ে মাথা ঘষতে হবে শ্যাম্পুর মতো। কিছুক্ষণ রাখার পর ঠান্ডা জলে মাথা ধুয়ে নেবেন। সপ্তাহে ২ দিন। এছাড়া আর একটা তেল তৈরি করে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করবেন। ১০০ গ্রাম নারকেল তেলে ধনে ১০ গ্রাম ও মেথি ১০ গ্রাম আধভাঙা করে ৭/৮ দিন ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ছেঁকে নিয়ে তেলটি ব্যবহার করতে পারেন। এসবের দ্বারা চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল ঘন ও কালো হবে, হঠাৎ চুলে পাক ধরবে না। চুলের গঠনের ওপর নির্ভর করে চুল ভেঙে যাওয়া। এর দ্বারা কিছুটা রক্ষা পাবে।
• খুশকিতে: হরীতকী (বীজ বাদে) ২টি ও মেহেন্দিপাতা ৮/১০ গ্রাম ৩ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ঠান্ডা হলে সেটি দিয়ে মাথা ভালোভাবে ঘযে কিছুক্ষণ রাখুন। তারপর শ্যাম্পু দিন অথবা উপরের যোগটি ব্যবহার করুন।