শরীরের জন্য কোলেস্টেরল কতটা জরুরি

একটা কথা শুরুতেই সকলের জেনে রাখা উচিত। শরীরে কোলেস্টেরল কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ গ্রাম কোলেস্টেরল শরীরে ঢোকা দরকার। শরীরে এই নির্দিষ্ট পরিমাণ কোলেস্টেরল না ঢুকলে শরীরে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আসলে কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের খুব গুরুত্বপূর্ণ বায়োকেমিক্যাল পদার্থ। ডাক্তারি মতে টোটাল কোলেস্টেরল থাকা উচিত ১৬০ মিলিগ্রাম, ট্রাইগ্লিসারাইড থাকতে হবে ১০০ মিলিগ্রাম, এলডিএল থাকতে হবে ১২৫ মিলিগ্রামের নিচে এবং এইচডিএল থাকবে অন্তত ৪৫ মিলিগ্রাম। সমস্যা তখনই মিশন দেখা দেয় যখন এই ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এইচ ডি এল কমে যায়। সেক্ষেত্রে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমাতে হবে এবং বাড়াতে হবে এইচ ডি বা

এলের পরিমাণ। তবে যাদের একবার হার্ট অ্যাটাক হয়ে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ট্রাইগ্লিসারাইড থাকতে হবে ৭০-এর নিচে ও এইচ ডি এল থাকতে হবে ৫০-এর ওপর। দেখা গিয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের এত রোগের কারণই হল ট্রাইগ্লিসারাইড প্রচণ্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়া এবং এইচ ডি এল কমে যাওয়া। শরীরের মধ্যমবর্গে অর্থাৎ ঠিক পেটের অংশে জমে যাচ্ছে চর্বির একটা আস্তরণ। বেড়ে যাচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট ডায়েট মেনে চলা উচিত।

কোন কোন খাবার থেকে দূরে থাকবেন:

ডায়েটে কী খাবার রাখতে পারেন সেই কথা বলার আগে কোন কোন খাবারগুলো থেকে দূরে থাকবেন সেটা বলে নেওয়া যাক।

খুব বেশি পরিমাণ ভাত, রুটি খাবেন না।

যে কোনও ধরনের তেলেভাজা, ভাজা মাছ, দুধের তৈরি জিনিস খাবেন না। দুধ যদি একান্তই খেতে হয় তাহলে গোরুর দুধ মোষের দুধ খাবেন না, বরং আজকাল প্যাকেটে যে ডবল টোনড বা ট্রিপল টোনড মিল্ক কিনতে পাওয়া যায় সেগুলো খান।

ময়দা, ওটস, মেরিনেটেড মিট, বিস্কুট, কেক, আইসক্রিম, পাউরুটি, বেসন থেকে দূরে থাকুন। মাংস যদি খেতে হয় তাহলে দেশি মুরগির মাংস খান। ব্রয়লার বা মাটন একেবারেই খাবেন না।

ডায়েট কেমন হবে:

সকালটা শুরু করুন প্রাকৃতিক খাদ্য দিয়ে। সকালের দিকে কিছুটা স্প্রাউট খেতে পারেন। সেই সঙ্গে একশো গ্রাম ওজনের যে কোনও একটা ফল। তবে ফলের তালিকা থেকে বাদ রাখবেন আম, কলা আর সবেদা। খেতে পারেন আপেল, পেয়ারার মতো অন্যান্য যে কোনও ফল। আজকাল ফল তাজা দেখানোর জন্য নানা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। সে জন্য ফল খাওয়ার আগে দশ মিনিট ধরে ঘষে জলে ধুয়ে নিন।

এরপর সকাল দশটা নাগাদ এক কাপ চা ও বাটি ভেজা ছোলা। যদি এর পরেও খেতে ইচ্ছে করে তাহলে একটা আখরোট বা কাঠবাদাম খেয়ে নিতে পারেন। আর অবশ্যই সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন ৪৫ মিনিট করে জোরে হাঁটুন।

মধ্যাহ্নের আহার কেমন হবে:

দুপুরে সেদ্ধ খাবার খাওয়া খুব জরুরি যেমন- উচ্ছে, ঢেঁড়শ-এর মতো সবজিগুলো সেদ্ধ করে বেশি পরিমাণে খাবেন। সবজির মধ্যে আলু কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য খুব ভালো। তবে আলু না ভেজে বরং সেদ্ধ করে খান। একবার আলু ভেজে নিলে তার আসল উপকারটাই নষ্ট হয়ে যায়। আবার খাদ্য তালিকায় সবজির মধ্যে বেগুন রাখতে পারেন। তবে সেই বেগুনও ভেজে নয়, পুড়িয়ে খান।

খাবার সঙ্গে বেশি করে স্যালাড নিন। স্যালাডে শশা, টমেটো, গাজর, বিটের মতো সবজিগুলো রাখুন। তবে স্যালাড কিন্তু খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন। জলে ভিজিয়ে রেখে ধোবেন না। রান্নাঘরের সিঙ্কের কল চালিয়ে দিয়ে পাঁচবার করে ধুয়ে ফেলুন। কারণ এই কাটা সবজিতে অনেক ধরনের জীবাণু থাকে।

ভালো করে না ধুয়ে নিলে সেগুলো থেকে যায়, যা থেকে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আজকের দিনে অলিভ অয়েল খাওয়ার একটা প্রবণতা বেড়েছে অনেকের মধ্যে। তবে অলিভ অয়েল দিয়ে আলু ভেজে খেলে তার কোনও উপকার নেই।

অলিভ অয়েল কখনওই ভাজতে নেই। অলিভ অয়েল যদি খেতেই হয় তাহলে স্যালাডের ওপর অল্প কিছুটা ছড়িয়ে খেতে পারেন। খেতে ভালো লাগবে। আবার এতে শরীরেরও উপকার।

খাবারের তালিকায় ডাল রাখুন। এছাড়া দেশি চিকেন বা মাছ খান। চিকেনের পাতলা স্ট্যু খান। আর মাছ কিন্তু ভেজে তার ঝোল তৈরি করে খাবেন না। বরং কাঁচা মাছকে ম্যারিনেট করে নিয়ে মাইক্রোভেনে স্টিমড করে বা ভাপা করে তারপর তা ঝোলের মধ্যে দিতে পারেন। এক কথায় মাছ ভাপিয়ে খেতে হবে। তবেই মাছের আসল উপাদানগুলো আপনার শরীরে যাবে।

বাঙালির কিন্তু ভাত না হলে চলে না। ভাত না খেলে পেট যেন ভরে না। তাই ডালের সঙ্গে সামান্য পরিমাণে ভাত মেখে খেতে পারেন। তবে পালিশ করা চাল একেবারেই খাবেন না। বরং বাজারে যে মোটা লাল চাল পাওয়া যায় সেটাই খান। রুটি বুঝে খাবেন। একটা সাধারণ মাপের রুটিতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। তাই এমন একটা রুটি খেলে সেই ক্যালরি বার্ন করতে আপনাকে ট্রেডমিলে অন্তত আধঘণ্টা হাঁটতে হবে। আর তা যদি না পারেন তবে দালিয়া বা গমের যে কোনও প্রোডাক্ট থেকে একদম দূরে থাকুন। আর একটা বড় ব্যাপার হল ডিম। মুরগির ডিম সেদ্ধ করে খেতে পারেন সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ টি। কুসুমসহ খেতে পারেন। ডিমে ভালো কোলেস্টেরল থাকে।

বিকেলে যা খাবেন:

বিকেল চারটে নাগাদ এক কাপ চিনি ছাড়া লাল চা, সঙ্গে একটু ভেজা ছোলা, পাকা পেঁপের মতো ফল খাওয়া যেতে পারে।

রাতের খাওয়া:

গভীর রাতে খাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করুন। রাতের খাওয়া শেষ করে ফেলুন সন্ধে সাতটার মধ্যে। খাওয়ার পর বাড়ির বিভিন্ন কাজ করতে পারেন। রাতে খুব হালকা খাবার খাবেন। যেমন গ্রিলড ভেজিটেবল, গ্রিলড চিকেন বা মাছ খান।

জল কীভাবে খাবেন:

খেতে খেতে একদম জল পান করবেন না। খাবার আধঘণ্টা আগে জল পান করুন। খাদ্য গ্রহণের দু’ঘণ্টা পরে আবার জল পান।

কোন তেল খাবেন: রান্নার জন্য আমাদের চিরাচরিত সর্ষের তেলই খাওয়া উচিত। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে সপ্তাহে এক চামচ করে ঘি খেলে তাতে এইচডিএল বাড়ে। তাই সপ্তাহে একদিন এক চামচ ঘি অনায়াসে খেতে পারেন।