হার্ট, করোনারি আর্টারি, ব্রেনের রক্তবাহী নালি বাদে শরীরের বাকি যে সব রক্তবাহী নালিগুলি আছে, সেগুলিতে সমস্যা দেখা দিলে তাকে পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ বলা হয়।
পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজেরও আবার দুটি ভাগ-
ক) ধমনিতে সমস্যা হলে তাকে বলে পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ।
খ) শিরাতেও সমস্যা হয়। উদাহরণ হিসেবে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস, ভেরিকোজ ভেইন, ক্রনিক ভেনাস ইনসাফিশিয়েন্সি সিনড্রোম ইত্যাদি।
কোলেস্টেরল জমে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত বহনকারী আর্টারি বা ধমনিতে। ধমনিতে কোলেস্টেরল জমার সঙ্গে ভেইন বা শিরার সেভাবে কোনও সম্পর্ক নেই। তাই আমাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ।
পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজে দেখা যায়, কোলেস্টেরল এবং আরও কিছু পদার্থ মিলে সাধারণত পায়ের ধমনিতে জমা হয়। এই জমা বা ডিপোজিটকে বলে প্লাক। এই প্লাক দীর্ঘদিন ধরে জমার ফলে রক্তবাহী ধমনি ক্রমশ সরু এবং শক্ত হয়ে যায়। একে বলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। যে ধমনিগুলি হার্ট থেকে ব্রেনে, কিডনিতে, পাকস্থলীতে, হাতে, পায়ে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত নিয়ে যায় সেগুলিতে এই সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে দেখা গিয়েছে পায়েই এই সমস্যা বেশি হয়। পায়ে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজের লক্ষণগুলি হল- হাঁটতে অসুবিধা হওয়া, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা, বিশেষ করে পায়ের ডিমে। এছাড়া পায়ে কোনও ক্ষত হলে তা শুকোতে চায় না, আঙুল কালো হয়ে গ্যাংগ্রিন হয়ে যাওয়া।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, সাধারণত যাঁরা পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজে ভুগছেন, তাঁদের করোনারি আর্টারি ডিজিজে ভোগার আশঙ্কাও থেকে যায়। তবে পেরিফেরাল না করোনারি আর্টারি- কোনটির সমস্যা আগে প্রকাশ পাবে তা ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে। আরও একটা জানার মতো বিষয় হল, পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ পুরুষদের বেশি হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা: উপরিক্ত লক্ষণগুলি নিয়ে কোনও রোগী চিকিৎসকের কাছে হাজির হলে, চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কথা বলেই অসুখটির সম্পর্কে বুঝতে পারেন। তবে পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ আছে কি না সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসক রোগীকে ডপলার টেস্ট, অ্যাঞ্জিওগ্রাম করাতে দিতে পারেন।
চিকিৎসা: কিছু ওষুধ খেতে হতে পারে। এছাড়া রয়েছে এন্ডোভাসকুলার প্রসেস অথবা সার্জিকাল বাইপাস।
এন্ডোভাসকুলার প্রসেসে কোনও কাটাকুটি ছাড়াই পায়ের ধমনির ভিতরে স্টেন্ট বসিয়ে ধমনির মধ্যে রক্তপ্রবাহের পথ সুগম করা হয়। অন্যদিকে হার্টে যেমন বাইপাস হয়, তেমনই পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজেও সেইরকম বাইপাস করা যায়।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ: সিগারেট বর্জন করুন। মদ্যপান কমিয়ে ফেলুন, ভাজাভুজি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। আর সারাদিনের মধ্যে অন্তত একটানা ২০ মিনিট ঘাম ঝরিয়ে হাঁটুন বা একবার এক্সারসাইজ করুন।